সাহিদ রহমান অরিন

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২১

স্পিন ভেলকিতে মুঠোয় সিরিজ

প্রথম ওয়ানডের পান্ডুলিপি পড়ে বোধহয় গতকালও খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। এদিন আসল কাজটা করে ফেলেছিলেন বোলাররা। মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানদের সামনে আবার সামলাতে খাবি খেতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তাদের দেওয়া মামুলি লক্ষ্য পেরুতে ব্যাটসম্যানদের কাজটা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। তা অনায়াসে সেরে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। আগামী সোমবার চট্টগ্রামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটা তাই হতে যাচ্ছে শুধু নিয়ম রক্ষার।

কাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০০ বল আর ৭ উইকেট অক্ষত রেখে জিতেছে তামিম ইকবাল বাহিনী। আগের ম্যাচে ১২৩ রান তাড়া করতে কিছুটা ভুগতে হয়েছিল স্বাগতিকদের। তবে কালকেরও কন্ডিশন ছিল আরেকটু ভালো। এবার তাই খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। লিটন দাস ঝলমলে শুরু করে ইনিংস টানতে না পারলেও অধিনায়ক তামিম করেছেন ফিফটি। ‘নতুন পজিশন’ চারে নেমে রান পেয়েছেন সাকিবও। দলকে জিতিয়ে ৫০ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। সে সময় তার সঙ্গী ছিলেন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম (৯*)।

১৪৯ রান তাড়ায় লিটন দাস শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। ব্যাটে-বলে ভালোই সংযোগ হচ্ছিল তার। এই ডানহাতির ব্যাটে আভাস ছিল বড় রানের। কাভার অঞ্চল দিয়েই বের করছিলেন রান। চার বাউন্ডারিতে থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আগের দিনের মতো আবার তাকে ছেঁটেছেন আকিল হোসেন।

তিনে নেমে আগের ম্যাচে রান পাননি নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিবের ব্যাটিং পজিশন পাওয়ায় তার ওপর ছিল প্রচ্ছন্ন চাপ। সেই চাপ সরাতে দরকার ছিল ভালো একটা ইনিংস। এদিন তামিমের সঙ্গে জমে যায় তার জুটি। লক্ষ্যের কথা ভাবলে আদর্শ ছিল তাদের ব্যাটিং। ঝুঁকি না নিয়ে নিরাপদে খেলা শেষ করার দিকে এগোচ্ছিলেন তারা। কিন্তু জুটির রান পঞ্চাশ হওয়ার আগে গড়বড়। শান্ত ফেরেন ঠিক আগের ম্যাচের মতোই। এবার জেসন মোহামেদের অফ স্পিনে পুল করতে গিয়ে ওই মিড উইকেটেই দিয়েছেন ক্যাচ। উইকেট ছুড়ে আসা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবার করেছেন ১৭ রান।

তামিম শুরু থেকেই ছিলেন সাবধানী। উইন্ডিজের পুঁজি কম হওয়ায় নিজের ভূমিকা পালন করাও ছিল সহজ। সাকিবের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে আরেকটি জুটি পেয়েছেন তিনি। মন্থর গতিতে খেলতে থাকা দেশসেরা ওপেনার তুলে নিয়েছেন ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের ৪৮তম ফিফটি। কিন্তু এরপরই বাজে শটে বিদায়। রেমন রেইফারের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তামিম। এরপর মুশফিককে নিয়ে বাকি কাজ সেরেছেন সাকিব। ৪০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শেষ করেছেন খেলা।

এর আগে পিচ-পরিস্থিতির একদম বিপরীতে গিয়ে টস জিতেও আগে ব্যাটিং বেছে নিয়েছে সফরকারীরা। শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের তৈরি করা চাপ তাদের করে ফেলেছে খোলসবন্দি। তা থেকে আর বের হওয়া সম্ভব হয়নি তাদের। টপ-অর্ডারে আসেনি ভালো শুরু। মিডল-অর্ডার দেখাতে পারেনি নিবেদন। একের পর এক উইকেট পতনে ইনিংসের মাঝপথেই ম্যাচের কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়েছে তারা।

সফরকারীরা ৪১ রানেই হারিয়েছে ৫ উইকেট। একশোতে যাওয়ার আগে খুইয়েছে ৮ উইকেট। তাদের সবচেয়ে বেশি রান এসেছে শেষ দুই উইকেটে। নবম উইকেটে আলজেরি জোসেফকে নিয়ে ৩২ রান এনেছেন রোভম্যান পাওয়েল। দশম উইকেটে আকিল হোসেনকে নিয়ে তুলেছেন ২৮ রান। আনকোরা এই দলের অভিজ্ঞদের একজন হওয়ার পরও পাওয়ালকে তারা নামিয়েছিল আট নম্বরে। এখান থেকেই ৪১ রান করে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। তার ব্যাটেই মূলত দেড়শো ছুঁই ছুঁই স্কোর গড়েছে ক্যারিবিয়ানরা। কিন্তু এত কম রান করে হাতের তালুর মতোই চেনা কন্ডিশনে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না তাদের। আগের ম্যাচে কিপটে বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সাকিব। কাল এক হালি শিকার ধরেছেন মিরাজ। প্রত্যাশিতভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তার হাতেই উঠেছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৪৮/১০, ৪৩.৪ ওভার

পাওয়েল ৪১, ওটলি ২৪

মিরাজ ২৫/৪, মুস্তাফিজ ১৫/২

বাংলাদেশ

১৪৯/৩, ৩৩.২ ওভার

তামিম ৫০, সাকিব ৪৩*

রেইফার ১৮/১, জেসন ২৯/১

ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা : মিরাজ (বাংলাদেশ)

সিরিজ : বাংলাদেশ ২-০-তে এগিয়ে

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close