নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জানুয়ারি, ২০২১

বাধা-সংঘর্ষ কাটিয়ে উচ্ছেদ

রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরের ৪ নম্বর অ্যাভিনিউ এলাকায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। রাস্তার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ দোকান ও স্থাপনা ভাঙতে এ অভিযান চালায় সংস্থাটি। তবে এ অভিযান কেন্দ্র করে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান বিহারি দখলদাররা। কয়েক দফা সংঘর্ষের পর আবার অভিযান শুরু হয়ে চলে বিকেল পর্যন্ত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে অভিযান শুরু হয়। ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল ২) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম সফিউল আজম ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এই উচ্ছেদ অভিযানে ৪ নম্বর সড়কের দুই পাশে প্রায় চার শতাধিক স্থায়ী, অস্থায়ী, ভাসমান স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে টিনেরঘর, পাকাঘর, দোকানপাট, তোরন, শেড ইত্যাদি ছিল। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযানস্থলে উপস্থিত থেকে অভিযানে দিকনির্দেশনা দেন।

এর আগে মিরপুর ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে লালমাটি পলাশ নগর সড়কের উভয় পাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। সকাল ১০টার আগে থেকেই পার্শ্ববর্তী নান্নু মার্কেট এলাকায় বুলডোজার, হ্যামারের মতো ভারী সরঞ্জাম এনে রাখা হয়।

মূলত সকাল ১০টা থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। জড়ো হতে থাকে শত শত বিহারি। সকাল ১১টার দিকে অভিযান শুরু করতে গেলে বাধা দেয় বিহারিরা। তারপর অভিযান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় সিটি করপোরেশন। এরপর পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পরে অভিযান শুরু হয়ে সেখানে ফুটপাতের ওপর থাকা একটি টিনশেড দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলে দখলদাররা সংঘবদ্ধ হয়ে অভিযান টিমের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা ঢিল ছুড়তে থাকলে পুলিশসহ উচ্ছেদ অভিযানে থাকা লোকবল পিছু হটে। পরে আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে চাইলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এভাবে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখানে কেউ কেউ ৩০ বছর পর্যন্ত জনগণের রাস্তা দখল করে আছেন। বিহারিদের নির্দিষ্ট পিলার পর্যন্ত সীমানা রয়েছে। তারা কিন্তু এটা জানে। কিন্তু জেনেও পিলারের বাইরে এসে দখল করেছে। এটা ৬৮ ফুট চওড়া সড়ক। আমরা তাদের আগেও বলেছিলাম নিজেদের থেকে সরে যেতে। তারা সেটি না করায় আমাদের অভিযানে আসতে হলো।’

জনগণের উপকারের জন্য এ অভিযান হয়েছে দাবি করে মেয়র বলেন, ‘এ অভিযান কিন্তু আমার জন্য না, জনগণের জন্য। এই সড়ক তাদের। যারাই দখল করবে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান হবে। এমনকি সড়ক প্রশস্ত করতে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও উচ্ছেদ করে সড়ক প্রশস্ত করা হবে।

দখলদারদের নোটিস দেওয়া প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘সরকারের বৈধ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রাখলে নোটিস ছাড়াই উচ্ছেদ করা হবে। নোটিস দিতে গেলে ঢাকা শহরে কোনো কাজ করা যাবে না। অবৈধভাবে দখল করে রাখলে সেজন্য আমি দায়ী না, সিটি করপোরেশন দায়ী না, বরং যে দখল করে রেখেছে সেই দায়ী।

আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, এই সড়কের পূর্ব ও পশ্চিমে- দুই দিকেই রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে, মাঝখানের এই অংশটুকু বাকি ছিল। এই সড়কটি একটি বাইপাস। এটি ওপেন করা হলে খুব সহজেই মিরপুর থেকে উত্তরার দিকে যাওয়া যাবে। এই সড়কের শেষ প্রান্তে থাকা ট্রাকস্ট্যান্ডও সরানো হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ট্রাক স্ট্যান্ডের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে।

এই উচ্ছেদের পরপরই এই রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ শুরু হবে এবং কালশীর প্যারালাল রোড হিসেবে এটি ব্যবহৃত হবে। এর ফলে বিমানবন্দরের দিকে খুব সহজেই যাওয়া যাবে বলে মেয়র জানান। উচ্ছেদ অভিযান সফল করায় মেয়র স্থানীয় জনসাধারণ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের ধন্যবাদ জানান।

উচ্ছেদ অভিযানে অন্যদের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রউফ নান্নু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close