প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ জানুয়ারি, ২০২১

শুরুতেই ট্রাম্পের নীতি বদল বাইডেনের

* প্রথম দিনেই সই ১৫ নির্বাহী আদেশে * জলবায়ু চুক্তি এবং ডব্লিউএইচওর কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা * তুলে নেওয়া হচ্ছে ৭ মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার নিষেধাজ্ঞা

শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু উল্লেখযোগ্য নীতি পাল্টে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ট্রাম্পের সব ‘ভ্রান্ত নীতি’ পাল্টানোর কাজ শুরু করেছেন তিনি। প্রথম কর্মদিবসে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ জোরদার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৫টি নির্বাহী আদেশে সই করেন বাইডেন। অন্য নির্বাহী আদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানকে ঠিক উল্টে দিয়েছে।

ওইসব আদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কার্যক্রমে ফিরে আসার ঘোষণা। এ ছাড়া নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তও আটকে দিয়েছেন বাইডেন। তুলে নেওয়া হচ্ছে সাত মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা।

যুক্তরাষ্ট্রের সময় বুধবার সকালের (বাংলাদেশ সময় গভীর রাত) দিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বাইডেন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বসে নির্বাহী আদেশগুলোতে সই করেন। শপথ নেওয়ার পর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার সময় জো বাইডেন টুইটে বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সংকট রয়েছে সেটি সামাল দিতে অপচয় করার মতো কোনো সময় নেই।’

নভেল করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে শপথ অনুষ্ঠান ছিল বেশ আলাদা। শপথ ও অন্য অনুষ্ঠানে হাতে গোনা কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে শপথ নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’

ট্রাম্প শাসনের অশান্ত বছরগুলোর পর একতার বার্তা দিয়ে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ‘সব আমেরিকানের’ এমনকি যারা তাকে ভোট দেয়নি তাদেরও প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তার তিনজন পূর্বসূরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ। এ ছাড়া ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও উপস্থিত ছিলেন।

বাইডেনের আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। এই পদে দায়িত্ব নেওয়া প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান-আমেরিকানও তিনি।

গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা ক্যাপিটল হিল দখল নিয়ে তা-ব ঘটানোর পর শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।

জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, কমলা হ্যারিস ও তার স্বামী ডো এমহফ পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে হেঁটে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান। সে সময় বন্ধু ও সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানান তারা।

নির্বাহী আদেশের বর্ণনা করে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ‘শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোই সংশোধন করবেন না বরং তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

নভেল করোনাভাইরাস মহামারি সামাল দিতে ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখেরও বেশি প্রাণহানি হয়েছে।

সব ধরনের কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে।

মহামারির বিষয়ে পদক্ষেপের সমন্বয় করতে একটি আলাদা দপ্তর গড়ে তোলা হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু করা প্রক্রিয়া স্থগিত করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আবার যুক্ত হওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার মুখপাত্র স্টিফানি দুজারিক জানান, মহাসচিব বলেছেন যে, সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।

বাইডেন আরো জানিয়েছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই হবে তার প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার।

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে আবার যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্বাহী আদেশ সই করেন তিনি। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ট্রাম্প।

বিতর্কিত কিস্টোন এক্সএল পাইপলাইনের প্রেসিডেন্সিয়াল অনুমোদন বাতিল করেছেন জো বাইডেন। এই পাইপলাইনের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী এবং নেটিভ আমেরিকান গোষ্ঠীগুলো এক দশকের বেশি সময় ধরে লড়াই করে আসছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ফোন করার পর এ বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করবেন বাইডেন।

বেসরকারি অর্থায়নে থাকা পাইপলাইনটির মূল্য প্রায় আট বিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি কানাডার আলবার্টা থেকে নেব্রাস্কায় দৈনিক ৮ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহন করত।

২০১৫ সালে এই পাইপলাইন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠায় আনা একটি বিলে ভেটো দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু সেটি উল্টে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

অভিবাসনের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা জরুরি প্রস্তাব বাতিল করেছেন বাইডেন। এই জরুরি প্রস্তাবের অধীনে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন এবং বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

অন্য নির্বাহী আদেশগুলো বর্ণ এবং লৈঙ্গিক সমতাবিষয়ক।

বাইডেন প্রেসিডেন্সির আওতায় প্রথম অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের স্বার্থকে প্রচার করবেন নাকি ‘সাদামাটা সত্য’ উপস্থাপন করবেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা’ রেখে তিনি ‘সরকারে স্বচ্ছতা এবং সত্য ফিরিয়ে আনতে’ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করবেন।

হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেস সেক্রেটারি জানান, সংকট নিরসনে মিত্রদের পাশাপাশি ইরানের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে, বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে আপত্তি নেই বলে জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা ও সিএনএন অনলাইন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close