নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২১

বুড়িগঙ্গাতীরে অভিযান তৃতীয় দিনে

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো অবৈধ ভবন

টং দোকান থেকে টিনশেড ঘর, একতলা ভবন থেকে চারতলা ভবন সবই ভাঙা পড়ছে অভিযানে। বুড়িগঙ্গা নদীতীরের ভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গতকাল বুধবার তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গতকাল দুপুর পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ধশত স্থাপনা।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার শুরু হওয়া এই পর্যায়ে অভিযান শেষ হবে আজ বৃহস্পতিবার। আগের দুদিনে ১৮৭টি স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। নদীর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে চার একর।

কর্মকর্তারা আরো জানান, দুই বছর আগেই এই এলাকায় অভিযানের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপের মুখে অভিযান চালানো যায়নি। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ না করে কর্মকর্তারা বলেন, নদীর সীমানায় যত স্থাপনা আছে, এবারের অভিযানে সবই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিমবাগ এলাকায় একটি এক্সকাভেটর দিয়ে নদীর সীমানায় গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছিল। দখলদাররা আগেই ভবন থেকে মালপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তাই অভিযান চালাতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়নি।

আগের দিন মঙ্গলবার একই এলাকার আশরাফাবাদে অভিযান চালানো হয়। ভাঙা পড়া ভবনের কয়েকজন মালিক অভিযান নিয়ে প্রশ্ন ওঠান। তাদের একজন সেকান্দার আলী। তার দাবি, পৈতৃক সূত্রে তিনি ওই জমিতে বসবাস করে আসছেন। এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র তার কাছে আছে। এর পরও তার ভবন ভাঙা পড়ছে। তিনি পথে বসে গেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছেন না কেন জানতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হতে পারেন, এই ভয়ে যাচ্ছেন না।

ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল। সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা গুলজার আলী, সহকারী পরিচালক রেজাউল করিমসহ অন্য কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের বিপুলসংখ্যক কর্মীও অভিযানস্থলে ছিলেন।

বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, যাদের ভবন ভাঙা পড়ছে, তারা কেউ বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকায় গণপূর্ত বিভাগ থেকে ২০১২ সালে পিলারগুলো ভুল জায়গায় বসানো হয়েছিল। এই সুযোগে দখলদাররা সেখানে স্থাপনা বানিয়ে বসবাস করছিলেন। যৌথ জরিপের মাধ্যমে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর তীরে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে স্থায়ী সীমানাখুঁটি বসানোর কাজ চলছে। কামরাঙ্গীরচরের যে এলাকায় এখন অভিযান চলছে, এই এলাকায়ও স্থায়ী সীমানাখুঁটি বসানো হবে। ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা গুলজার আলী বলেন, বিদ্যমান গণপূর্তের ‘ভুল’ সীমানাখুঁটি থেকে সর্বোচ্চ ৫০ ফুট এবং সর্বনিম্ন ২০ ফুট ভেতর পর্যন্ত গড়ে ওঠা স্থাপনা তারা ভাঙছেন। অভিযান চালাতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে না।

ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বড় পরিসরে অভিযান চালিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। এরপর নদীতীর রক্ষা ও এর সৌন্দর্যবর্ধনে একটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায়ই পুনর্দখল ঠেকাতে বিরতি দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close