সংসদ প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

মহামারির মন্দা এড়ানো গেছে

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারিকালে মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের বিশেষ পদক্ষেপের ফলে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দার অনেকটাই বাংলাদেশ এড়াতে পেরেছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের বিশেষ পদক্ষেপের ফলে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার-দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান এবং জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নানের পৃথক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিচার্সের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। এই রিপোর্টে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

তিনি আরো বলেন, শুরু থেকেই তার সরকার সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, যার ফলে এ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যুহার এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে অধিকতর সাফল্য দেখাতে পেরেছে।

তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই করোনার টিকা দেওয়া শুরু হবে।

শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টাপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সরকার ‘ডেল্টাপ্লান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে।

তিনি বলেন, নিরাপদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সহনীয় সমৃদ্ধিশালী ব-দ্বীপ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার বাংলাদেশ ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গার এক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ উচ্চতর পর্যায়ের তিনটি জাতীয় অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত।

তিনি বলেন, যেগুলো হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এই একই সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অজন করা।

শেখ হাসিনা এ সম্পর্কে আরো বলেন, আন্তদেশীয় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নৌপরিবহন, স্যানিটেশন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সব খাত বিবেচনায় রেখে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ অপরিহার্য ছিল।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সমগ্র একুশ শতকব্যাপী ১৭টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহাপরিকল্পনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা জিডিপির আড়াই শতাংশ।

দেশে মাছের উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়েছে : প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা বলেছেন, তার সরকারের কার্যকর এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপে দেশের মৎস্য উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়ে দেশ আজ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সরকার-দলীয় সংসদ সদস্য আলী আজমের এক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের কার্যকর এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপে দেশে মাছের উৎপাদন ৫০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা, ২৫ প্রজাতির স্বাদুপানির মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা এবং চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন এবং চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাদুপানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে এবারে বাংলাদেশ বিশে^ দ্বিতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে এবং দেশ আজ মৎস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একই সঙ্গে বর্তমানে জনপ্রতি দৈনিক ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২ দশমিক ২৫ গ্রাম মাছ আমরা গ্রহণ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় মৎস্য খাতের উন্নয়নে সরকার গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, পাঙ্গাশ, শিং, কৈ, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছের উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশের মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বদ্ধ জলাশয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্রুড ব্যাংক স্থাপন (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে আমদানিকৃত সর্বোচ্চ জেনেটিক গুণসম্পৃদ্ধ সিলভার কার্প, বিগহেডেড কার্প ও গ্রাস কার্প মাছের পোনা দেশের ৩৯টি সরকারি হ্যাচারিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে প্রতি বছর দেশব্যাপী পোনা অবমুক্তি কার্যক্রম ও বিল নার্সারি স্থপন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং মাছ চাষের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সারা দেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৮৯ হেক্টর জলাশয় সংস্কার ও পুনঃখনন করা হয়েছে। জাটকা নিধন বন্ধ ও ইলিশের জন্য ছয়টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠাসহ আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে এবং পরে মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close