প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২১

বিভেদ দূর করার ডাক বাইডেনের

বিভেদহীন-ঐক্যবদ্ধ নতুন দিনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন জো বাইডেন। গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন সময় দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১১টা) ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম প্রাঙ্গণের ঐতিহাসিক মঞ্চে তাকে শপথবাক্য পড়ান যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অবস্থা, নাজুক অর্থনীতি, ভেঙে পড়া পররাষ্ট্র নীতি, ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ট্রাম্পের চূড়ান্ত অসহযোগিতা আর সহিংসতার আশঙ্কার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই শপথের মঞ্চে উঠেন ৭৮ বছরের বাইডেন। তার আগে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। মার্কিন ইতিহাসের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্টকে শপথ পড়ান সুপ্রিম কোর্টের নারী বিচারপতি সোনিয়া সটোমায়োর। দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে বাইডেনের অভিষেকে ছিলেন না বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিন সকাল বেলাই তিনি স্ত্রী মেলানিয়ার হাত ধরে হোয়াইট হাউস ছাড়েন। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান মেরিন ওয়ানে শেষবারের মতো চড়ে চলে যান অ্যান্ডুস ঘাঁটিতে। সেখানে বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে বসবাসের উদ্দেশে চলে যান ফ্লোরিডায়। খবর সিএনএন, বিবিসি ও আলজাজিরার।

ট্রাম্পের রেখে যাওয়া বিভক্ত দেশ আর সবকিছু ওলট-পালট করে দেওয়া চার বছরের পর এবার বাইডেনের দেওয়া উদ্বোধনী ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য ‘ঐক্যবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র’। প্রায় আধঘণ্টার ভাষণে জাতীয় ঐক্যের জন্য তিনি জানান ইতিবাচক আহ্বান। শপথের পর অভিষেক ভাষণে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘জাতি-বর্ণের বিভেদমুক্ত ঐক্যবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রই আমার স্বপ্ন’। প্রায় ২০ মিনিটের মতো দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্যই থাকবে চলমান মহামারিকে পরাজিত করা, যুক্তরাষ্ট্রের সুদিন ফিরিয়ে আনা, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও ভালো রাখা।’

সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক হয়ে থাকে আনন্দ-উল্লাসমুখর পরিবেশেই। হাজার হাজার মানুষ অভিষেক অনুষ্ঠান উদ্যাপন করতে ওয়াশিংটনে জড়ো হয়। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন রক্তাক্ত দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকেই এবার বেশি মনোযোগ দিতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। সে কারণে ওয়াশিংটন ডিসির গণতন্ত্রের যে তাজ একসময় বিশ্বব্যাপী ছিল প্রশংসিত, তা-ই পরিণত হয়ে যায় সেনা-পুলিশের রাজ্যে। বাইডেনের শপথ নির্বিঘ্ন করতে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মোতায়েন করা হয় ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা, বন্ধ করা হয় বেশকিছু রাস্তা। হুমকি বিরাজ করছে দেশের ভেতর থেকেই, প্রেসিডেন্টের শপথ ঘিরে এমন পরিস্থিতি মার্কিন ইতিহাসে এর আগে কখনো দেখা যায়নি। তাই শপথ অনুষ্ঠানে জায়গা হয়েছিল মাত্র এক হাজার অতিথির। নভেল করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অতিথিদের আসনও ছিল সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাজানো।

শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা এবং তাদের স্ত্রী। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে ছিলেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

এর আগে সকাল বেলায় নিজ রাজ্য ডেলাওয়ার ছেড়ে ওয়াশিংটনে আসেন বাইডেন। শপথের আগে রোমান ক্যাথলিক চার্চ সেইন্ট ম্যাথিউ ক্যাথেড্রালে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জিল বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, তার স্বামী ডগ অ্যামহফ এবং ঊর্ধ্বতন কংগ্রেসম্যান, সিনেট ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার, রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল, হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও হাউস রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি।

অভিষেক ভাষণের পর সাধারণত নতুন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটল হিলে প্রবেশ করেন। কংগ্রেসে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয় তাদের জন্য। তবে এবার মহামারির কারণে এ অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এরপর সস্ত্রীক বাইডেন যান ক্যাপিটল হিলের অদূরে আর্লিংটন জাতীয় সমাধিতে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত বীর সেনাদের উদ্দেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপর সেনাবাহিনীর একটি দল তাকে এসকোর্ট করে নিয়ে যায় হোয়াইট হাউসে। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন সাদাবাড়িটির নতুন এই বাসিন্দা।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঝঞ্জামুখর শাসনামলের শেষ দুই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ক্যাপিটল হিলের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা-হাঙ্গামার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের জন্য নতুন এক শঙ্কার আবহে ক্ষমতা নিলেন বাইডেন। নতুন সূচনার এই মুহূর্তের অনুভূতি ফুটে উঠেছে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের এক ডেমোক্র্যাটের কথায়, ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। কিন্তু আমরা যে ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছি তা ভোলা কঠিন। এখন উদ্বেগটা ক্যাপিটলের সেই দাঙ্গা পরবর্তী নিরাপত্তা নিয়ে নয়, বরং আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আর কীভাবেই বা সামনে এগোব তা নিয়ে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close