সাহিদ রহমান অরিন

  ২১ জানুয়ারি, ২০২১

একপেশে জয়ে রঙিন প্রত্যাবর্তন

শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, চ্যালেঞ্জটা ছিল বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসকে হার মানানোরও। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে কাউকে অনুকরণ না করে একদম ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’ নিয়ে নতুন স্বাভাবিকতায় ফিরতে চেয়েছিল টাইগাররা। সে আকাক্সক্ষা পূরণও হলো অতি সহজে।

১০ মাস ১০ দিনের করোনা নির্বাসন কাটিয়ে বাংলার মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার দিনটা একপেশে জয়ে রাঙালেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানরা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কাল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ দল। যে ম্যাচে সবাইকে ছাপিয়ে নায়ক বনে গেছেন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিব। টাইগারদের শীর্ষ তারকার বিষমাখা ঘূর্ণির সঙ্গে অভিষিক্ত তরুণ হাসান মাহমুদের গতির মিশ্রণে কুপোকাত ক্যারিবীয়রা। আগামীকাল শুক্রবার আইসিসি ওয়ার্ল্ড সুপার লিগের আওতাধীন তিন ম্যাচের সিরিজটি নিজেদের করে নিতে ফের মাঠে নামবেন তারা।

নতুন বছরের প্রথম ম্যাচেই এমন দাপুটে জয়টা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। করোনা সংক্রমণের ভয়ে ও ব্যক্তিগত কারণে উইন্ডিজের সেরা তারকাদের কেউই আসেননি। কাল তো তাদের ছয়জন খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়েছে!। একপেশে লড়াইয়ের আভাস তাই ছিল শুরু থেকেই। দিনের শুরুতে সে পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। পরে ৯৭ বল হাতে রেখে ম্যাচটা মুঠোয় পুরানোর কাজটা সেরেছেন ব্যাটসম্যানরা। ক্যারিবিয়ানদের হয়ে একাই আলো ছড়িয়েছেন স্পিনার আকিল হোসেন। দারুণ বোলিং করে ম্যাচের আয়ু খানিকটা বাড়িয়েছেন তিনিই।

জিততে হলে মাত্র ১২৩ রান করতে হতো বাংলাদেশকে। মামুলি এই লক্ষ্যে খুব খারাপ না করলে হারার উপায় নেই। দুই ওপেনার কিছুটা ধুঁকলেও পেয়ে গেলেন জুতসই শুরু। একপ্রান্তে আলজারি জোসেফ শুরু থেকেই বাড়তি বাউন্স আদায় করে চাপ রাখছিলেন। কিন্তু আরেক পাশে চিমার হোল্ডার তা আলগা করে দেন।

অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে কিছু রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে সারাক্ষণই তামিম-লিটন দুজনকেই হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়। বাঁ-হাতি স্পিনার আকিল হোসেন এসেই সেই চাপ বাড়িয়ে দেন অনেক। দারুণ টার্ন আদায় করে নেন তিনি। লিটন (১৪) আউট হন তেমন এক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে।

সাকিবের বদলে তিনে সুযোগ পেয়ে প্রথমবার তা কাজে লাগাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনিও শিকার আকিলের। ৯ বলে ১ রান করে শর্ট মিড অনে দেন সহজ ক্যাচ।

অধিনায়ক তামিমও ধুঁকছিলেন। তবু সংগ্রাম করে টিকে ছিলেন। প্রায় সবকটি বল ব্যাকফুটে গিয়ে খেলছিলেন তিনি। লক্ষ্য কম থাকায় প্রচুর ডট বল খেলারও সুযোগ মিলছিল তার। প্রথম যে বলটি এগিয়ে এসে খেলতে গেলেন, সেটিতেই বিদায়। ৬৯ বলে দেশসেরা ওপেনার করেন ৪৪ রান। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তামিম অবশ্য বললেন, উইকেট বিবেচনায় এমন মন্থর ব্যাটিং যুতসই ছিল।

তামিমের কথা ফেলে দেওয়ার উপায় নেই। কারণ পিচ ব্যাটিংবান্ধব হলে কেউ না কেউ হাত খুলে খেলতেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ে স্বস্তির দেখা পাননি বল হাতে এক হালি শিকার ধরা সাকিবও। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা এ তারকার ব্যাটিংয়ের দিকে সবার নজর থাকলেও বেশ হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে তাকে। তবে সহজ লক্ষ্য হওয়ায় সাকিব খেলছিলেন রয়েসয়ে। কিন্তু আকিলের অসাধারণ একটি ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান তিনি। বাংলাদেশের জন্য তখন স্বস্তি ছিল যে, ওই বলটিই ছিল আকিলের স্পেলের শেষ বল। অন্যথায় আরেকটু দুর্ভোগ হয়তো পোহাতে হতো টাইগারদের। এরপর আর কোনো বিপদ হয়নি। বাকি কাজ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে শেষ করেন ‘ভাইরা-ভাই’ মুশফিকুর রহিম।

এর আগে হিমেল সকালে কাজের কাজটা সেরে রেখেছিলেন টাইগার বোলাররা। ক্যারিবিয়ানদের বেঁধে ফেলেন মাত্র ১২২ রানে। শুরুতে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে তোপ দাগান ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ। এরপর সফরকারীদের ঘূর্ণির মায়াজালে বেঁধে ফেলেন সাকিব। টানা ৩ উইকেট তুলে দলটির মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেন নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা এ অলরাউন্ডারই। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮ রানের খরচায় পান ৪ উইকেট।

মাঝে ৬ উইকেটে রোভমান পাওয়েলের সঙ্গে একটি দারুণ এক জুটি গড়েছিলেন কাইল মেয়ার্স। উইন্ডিজের ব্যাটিং দেখার মতো ছিল এ সময়টুকুই। ৫৯ রানের জুটিতে দলীয় সংগ্রহ ১০০ পার করেন তারা। এ জুটি ভাঙেন অভিষিক্ত হাসান। পর পর দুই বলে দুটি উইকেট তুলে তৈরি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। সব মিলিয়ে দেশের মাটিতে ক্রিকেট প্রত্যাবর্তনের দিনটা স্মরণীয়ই করে রেখেছেন রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১২২/১০, ৩২.২ ওভার

মেয়ার্স ৪০, পাওয়েল ২৮

সাকিব ৮/৪, হাসান ২৮/৩

বাংলাদেশ

১২৫/৪, ৩৩.৫ ওভার

তামিম ৪৪, মুশফিক ১৯*

আকিল ২৬/৩, জেসন ১৯/১

ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা : সাকিব

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close