বদরুল আলম মজুমদার

  ২১ জানুয়ারি, ২০২১

মহামারি শেষে গন্তব্য বাড়বে বিমানের

২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার শীর্ষ ১০ এয়ারলাইনসে ঠাঁই করে নেওয়ার পরিকল্পনা

আরো বেশি গন্তব্যে ডানা মেলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস (বলাকা)। লোকসান এড়িয়ে সংস্থাটি এখন আগের চেয়ে বেশি গন্তব্যে চলতে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, বিমানের এগিয়ে যাওয়ার পথে এখন বাধা শুধু নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। মহামারির ধকল কাটিয়ে ওঠার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। প্রতিষ্ঠার অর্ধশত বছর উদ্যাপনের আগে বিমানের আকাশ বড় করতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।

বিমান সূত্রে জানা যায়, সংস্থাকে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যেই এশিয়ার শীর্ষ ১০ এয়ারলাইনসে ঠাঁই করে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের। ওই পরিকল্পনায় আছে এ সময়ের মধ্যে বিমানের বর্তমান বহর দ্বিগুণ করা, নিউ ইয়র্কসহ ১০টি নতুন রুটে ফ্লাইট চালু করা এবং বিশ্বমানের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য।

বিমানের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের ১৯টি শহরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গন্তব্য রয়েছে। বিমান বহরে ১৯টি উড়োজাহাজ আছে যার মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিম লাইনার, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিম লাইনার, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং তিনটি ড্যাশ ৮-৪০০। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই বহর দ্বিগুণ করার চিন্তা করছে বিমান কর্তৃপক্ষ। নিউ ইয়র্কসহ আরো ১০টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে আগামী মার্চে চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা থেকে টরন্টো (কানাডা) সরাসরি ফ্লাইট। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছেন, ড্রিমলাইনার ড্যাশ নাইন দিয়ে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালানো হবে। রুটটি চালু হলে ১৭ ঘণ্টায় যাওয়া যাবে যুক্তরাষ্ট্র। বহরে নতুন নতুন এয়ারক্রাফট যুক্ত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক রুটের সংখ্যা বাড়াচ্ছে বিমান। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বিমান চলাচল শুরু হচ্ছে ঢাকা টরন্টো রুটে। এই রুট চালু করতে গত বছরে আবেদন করে বিমান। এতে সম্মতি দিয়ে বেইজ স্টেশন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরীক্ষার কথা জানায় কানাডা। তবে কোভিডে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরাসরি পরীক্ষা না করে বিকল্প উপায়ের কথা ভাবছে দেশটি।

মোকাব্বির হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিডের ভয়াবহ সংক্রমণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে বিমান পরিবহন সংস্থা। অন্যান্য দেশের বিমান সংস্থার মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও ধাক্কা খেয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে উঠে আসার জন্য আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে আনার চেষ্টার করছি। কিছুটা সফলও হয়েছি। স্বল্প পরিসরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস চার্টার্ড, বিশেষ, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। কিছুটা ব্যয় সংকোচন করে হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা নিয়মিত পরিশোধ করে যাচ্ছে। কোভিডের কারণে বিমান এখন পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেনি।’

নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আগামী ১০ বছরের মধ্যেই এশিয়ার টপ টেন এয়ারলাইনসের অন্তর্ভুক্ত করার কাজ করছি আমরা। সুবর্ণজয়ন্তীতে বিমানকে দেশের মানুষ অন্যভাবে দেখবে। এজন্য নেওয়া হচ্ছে বিশাল কর্মপরিকল্পনা।। টিকা উদ্ভাবনের পর এখন অপেক্ষা করছে বৈষিক মহামারির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার।’ এভিয়েশন বিশ্লেষক ও রিজেন্ট এয়ারলাইনসের সিইও আশীষ রায় প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েও এগোতে পারছে না। তারপরও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। লোকসান কাটিয়ে উঠতে বিমানের ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় এমডি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে সরকারের কজন কর্মকর্তা হাল ধরেন। তারাও বিমানের নানা ধরনের অনিয়ম অরাজকতা ও অপচয় বন্ধ করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিমান লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। তাছাড়া বর্তমান পর্ষদ আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিমানকে এশিয়ার সেরা দশে নিয়ে আসার কর্মপরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার জন্য ইতিবাচক।

জানা যায়, ঢাকা-টরেন্টু রুটে চলাচল করবে ড্রিমলাইনার ড্যাশ নাইনের মতো অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ। এতে যাত্রী আসন ২৯৮টি। এ রুট দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার অন্য দেশে যাত্রী নিতে এয়ার কানাডার সঙ্গে চুক্তিও করেছে বিমান। মার্চে দেশের ভেতরেও দুটি রুট চালু করতে যাচ্ছে বিমান। আকাশপথে যোগাযোগ হবে যশোর-চট্টগ্রাম ও সিলেট চট্টগ্রামের। এছাড়া দিল্লি, চেন্নাই, ব্যাংকক রুটে দ্বিগুণ করা হবে ফ্লাইট। এজন্য শিগগির বহরে যুক্ত হচ্ছে আরো দুটি ড্যাশ এইট ৪০০।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জাতীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর টানা ৩৫ বছর বিমান ছিল সরকারের করপোরেশনভুক্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এ সময়ের মধ্যে বিমান বরাবরই ছিল লোকসানের কবলে। যদিও অনেকের মতে, আশির দশক ছিল বিমানের সোনালি সময়। ওই সময়ের আলোচিত ব্র্যান্ডনিউ পাঁচটি ডিসি-১০ উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান দাপিয়ে বেড়িয়েছে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে। জাপানের নারিতা থেকে শুরু করে আটলান্টিকের ওপারে নিউ ইয়র্কসহ ২৯টি গন্তব্যে ছিল বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট।

পরে বছরের পর বছর লোকসানে ঘুরপাক খায় বিমান। লোকসানের অন্যতম কারণ হিসেবে দুর্নীতিবাজ একটি শক্তিশালী চক্রকে বরাবরই দায়ী করা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন পর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় বিমানে ফিরে আসে স্বচ্ছতা। গত দুই বছরে টিকিট ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি এবং দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় দেড় যুগ পর লাভের মুখ দেখতে শুরু করে সংস্থাটি। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা মুনাফা করে বিমান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close