বিবিসি বাংলা

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২১

ভারতীয় পেঁয়াজে আগ্রহ কমল

ভারতীয় পেঁয়াজে আগ্রহ হারিয়েছেন দেশের আমদানিকারকরা। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থলবন্দরগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজ আসেনি। হিলি, বেনাপোল এবং ভোমরা স্থলবন্দরে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত আট দিন ধরে কোনো পেঁয়াজই আনেনি এসব স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। হিলি বন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতি জানিয়েছে, এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গড়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাকে করে ৪,০০০ মেট্রিক টনের মতো পেঁয়াজ আসে। তবে গত এক সপ্তাহে কোনো পেঁয়াজ আসেনি।

কারণ হিসেবে সমিতির সভাপতি মো. হারুন উর রশিদ জানান, ‘এবার দেশি পেঁয়াজ ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পড়তা হচ্ছে না। ভারতের ভেতরেও পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি, বাংলাদেশে সেই তুলনায় কম। তাই হয়তো গত কিছু দিনে পেঁয়াজের একটা গাড়িও ঢোকেনি।’

বেনাপোল হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ ট্রাকের মতো পেঁয়াজ আসে বলে জানান এ স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ সবসময় জনপ্রিয় কারণ ভারতীয় পেঁয়াজে ঝাঁঝ কম। সাধারণত দেশি পেঁয়াজেরই দাম বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর উল্টো। যেহেতু দেশিটাই কম দামে কেনা যাচ্ছে তাই ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কম রয়েছে।’

রাজধানী ঢাকার বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকার মতো। অথচ ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১০ টাকা বেশি দামে। ইদানীং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পেঁয়াজ বলে এক ধরনের নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আরো কম দামে ১৬ থেকে ১৮ টাকায়।

ঢাকায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারের কমিশনিং এজেন্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টিসিবি অনেক কম দামে পেঁয়াজ দিচ্ছে। টিসিবির হাতে অনেক পেঁয়াজ আছে। আমদানি পেঁয়াজ এমনিতেই কেউ খাচ্ছে না। যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা টিসিবির। চীন, নেদারল্যান্ডসেরও কিছু ইম্পোর্টেড পেঁয়াজ আছে। সেটাও ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।’

আমদানিতে শুল্ক : গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভর করে প্রায়ই এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবার পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দেয় ভারত। তবে এ মাসের শুরুর দিকে ফের আমদানি শুরু হলে দিন দশেক পরই আনা বন্ধ করে দেন দেশের আমদানিকারকরা। তাছাড়া চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% শুল্ক আরোপ করে সরকার। এ বিষয়ে কমিশনিং এজেন্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত পেঁয়াজ আনতে খরচ পড়ছে ভারতীয় ৩০ রুপির মতো। এরপর ডলারে কনভার্ট করে, শুল্ক দিয়ে, বাংলাদেশ অংশে প্রবেশের পর পরিবহনসহ দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে।’

সরকারের বর্ধিত শুল্ক আরোপের কারণেও আমদানি কম হচ্ছে বলে মনে করেন বেনাপোলের আমদানিকারক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ এমনিতেই এই মৌসুমের পর অর্থাৎ তিন-চার মাস পর কমে যাবে। দেশি কৃষকের সুবিধার জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হলেও শুল্ক উঠে গেলে তখন আবার ভারতীয় পেঁয়াজের দামও কমবে, চাহিদাও বেড়ে যাবে।’

ভারতীয় পেঁয়াজ বন্ধের ডাক : নিজেদের সুবিধামতো ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি এবং বন্ধ করে, এমন অভিযোগে সম্প্রতি ভারতীয় পেঁয়াজের বিপক্ষে বাংলাদেশিদের এক ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভারত আবারও পেঁয়াজ রপ্তানি করতে যাচ্ছে, এমন খবর প্রকাশের পরই ভারতীয় পেঁয়াজ বয়কটের ডাকে ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ চালু হয়ে যায়। ফেসবুকে সার্চ দিলেই দেখা যাচ্ছে #নড়ুপড়ঃঃরহফরধহড়হরড়হ এবং ‘#ভারতীয় পেঁয়াজ বর্জন’ করি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অনেকেই পোস্ট দিয়েছেন। তাতে নানা রকম বক্তব্য রয়েছে। এতে একজন লিখেছেন, ‘দেশি কৃষকদের বাঁচান, ভারতীয় পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করুন।’ আর একজনের পোস্টে লেখা, ‘পেঁয়াজের ঘাটতির সময় দাদাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

ভারতীয় পেঁয়াজের বিপক্ষে পোস্টার লিখে নিজের ছবি তুলে অনেকে পোস্ট করেছেন। এ রকম বহু পোস্ট দেখা যাচ্ছে ডিসেম্বরের শেষভাগ থেকে এ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close