নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২১

‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকা পরীক্ষার অনুমতি চাইল গ্লোব

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রতিষেধক হিসেবে নিজেদের উদ্ভাবিত ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষার জন্য অনুমতি চেয়েছে গ্লোব বায়োটেক। এজন্য রিসার্চ প্রটোকল জমা দিয়েছে দেশি এই প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) কর্মকর্তাদের কাছে এই প্রটোকল জমা দিয়েছেন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। বিএমআরসির পক্ষে একজন সহকারী পরিচালক তাদের আবেদন গ্রহণ করেন।

অনুমোদন পেলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঢাকার যেকোনো একটি বেসরকারি হাসপাতালে একশোর মতো স্বেচ্ছাসেবকের ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হবে।

পরে গ্লোব বায়োটেকের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এই ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছি বঙ্গভ্যাক্স। দেশে কোনো ভ্যাকসিনের ফেইজ-১-এর ট্রায়াল (মানবদেহে প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা) আমাদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

ড. আসিফ জানান, ‘গ্লোব বায়োটেকের পক্ষে এ প্রটোকল জমা দিয়েছে সিআরও (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অরগানাইজেশন)। বিএমআরসিতে ২০টি নথিতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল জমা দেওয়া হয়েছে। আবেদনে একসঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষে সিআরও লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজটি করবে। অনুমোদন পেলে একটি সরকারি হাসপাতালে ট্রায়াল দেওয়া হবে।’

ড. আসিফ মাহমুদ এর আগে ৬ জানুয়ারি প্রতিদিনের সংবাদকে জানিয়েছিলেন, ‘কোথাও থেকে বাধা না এলে’ টিকা বাজারে আনার পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ছয় মাস লাগবে বলে তিনি আশা করছেন।

গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাঁকন নাগ গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর আবেদনটি তাদের পক্ষ থেকে করেছে ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অরগানাইজেশন লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে, যার স্পন্সর করছে গ্লোব বায়োটেক।

কাঁকন নাগ আরো বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করতে হয়, সেই তৃতীয় পক্ষ হিসেবেই কাজ করছে ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অরগানাইজেশন লিমিটেড।

রিসার্চ প্রটোকল জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সিতেশ চন্দ্র বাছাড়, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন।

গত ২৮ ডিসেম্বর গ্লোব বায়োটেককে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গ্লোব বায়োটেকের টিকার পরীক্ষায় আইইডিসিআরের গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন শিক্ষক যুক্ত আছেন।

বিশ্বে যেসব টিকা তৈরির কাজ করা হচ্ছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালপর্যায়ে রয়েছে ৪২টি টিকা আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগের অবস্থায় আছে ১৫৬টি। ওই তালিকায় গ্লোব বায়োটেকের তিনটি টিকার নাম আছে।

মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এই গবেষণায় কাজ করবে ৫৭ জনের একটি দল। এই দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব জানান, অনুমোদন পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই ট্রায়াল শুরু করতে পারবেন তারা। শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এটা প্রয়োগের পরিকল্পনা তাদের।

গত ২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি প্রথম টিকা উদ্ভাবন করার ঘোষণা দেয়। সেদিন তারা জানিয়েছিল, ৮ মার্চ তারা এই টিকা উদ্ভাবনের কাজ শুরু করে। ৫ অক্টোবর গ্লোব জানায়, তারা সফলভাবে প্রাণীদেহে তাদের পরীক্ষা চালিয়েছে। এখন মানবদেহে পরীক্ষা চালাতে তারা প্রস্তুত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close