নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২১

পি কের পাচার করা অর্থ ভারত কানাডা সিঙ্গাপুরে

পি কে হালদার নামে পরিচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের পাচার করা অর্থ ভারত, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে রয়েছে বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ৮৩ জন। তাদের সবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে হাইকোর্টে ওই প্রতিবেদন জমা দেয় বিএফআইইউ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেন পি কে হালদার। প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে ইন্টারপোলের রেড নোটিসে অন্যতম অর্থপাচারকারী এই পি কে হালদার। তার অর্থপাচার ইস্যু নিয়ে হস্তক্ষেপ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তথ্য চাওয়া হয় পাচারকারীদের।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এই রিপোর্টের মাধ্যমে পি কে হালদারের অর্থপাচারের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র মিলেছে। বিএফআইইউয়ের এ প্রতিবেদনের ওপর আগামী ২০ জানুয়ারি শুনানি করবে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছিল, সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারের অনিয়মের সঙ্গে ৬২ জনের সম্পৃক্ততা মিলেছে। এরই মধ্যে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে গত বৃহস্পতিবার জানান দুদক সচিব মু আনোয়ারুল হাওলাদার। তিনি বলেন, হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় ৬২ জনের নাম পেয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। ওই ৬২ জনের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা দুদক জব্দ করেছে বলে জানান আনোয়ারুল হাওলাদার।

গত বছরের জানুয়ারিতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছিল দুদক। মামলাটির তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন।

এই মামলার তদন্তে নেমে বুধবার পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় দুদক।

তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় এর আগে ৪ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শংখ ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শংখ ব্যাপারীর নামে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পি কে হালদারের অর্থায়নে কেনা হয়েছে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান।

আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে পি কে হালদার বিদেশ পালানোর পর গত বছরের ৮ জানুয়ারি দুদক তার বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পরিষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

ওই চার কোম্পানি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

এর মধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ২৭৫ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদার তার নিজের, আত্মীয়দের, বন্ধু ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে আটটি কোম্পানিতে ৬৭ কোটি ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৯ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ অনুসন্ধানে মেলেনি।

এর মধ্যে সুখাদা লিমিটেড নামক একটি কোম্পানিতে অবন্তিকা বড়াল, প্রীতিষ কুমার হালদার এবং সুসমিতা সাহার নামে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে, যা আসলে পি কে হালদারের টাকা বলে দুদকের ধারণা।

পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। তার মা লীলাবতী হালদার এবং অবন্তিকা বড়ালসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close