সিলেট প্রতিনিধি

  ১৯ অক্টোবর, ২০২০

শরীরে আঘাতের ১১৩ চিহ্ন উপড়ে ফেলা হয় ২ নখ

* সিলেটে রায়হান হত্যার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর * ৬ দাবি মায়ের

সিলেটে নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ মারা যাওয়া রায়হান আহমেদের প্রথম দফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পিবিআইকে হস্তান্তর করেছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। প্রতিবেদনে রায়হানের শরীরে ১১৩টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাঠির আঘাতের কারণে চামড়া ছিলে যাওয়ার ১৪টি জখম পাওয়া গেছে। তার দুটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলাসহ শরীরে শুধু লাঠির আঘাত রয়েছে ১১১টি। নির্যাতনের সময় রায়হানের পাকস্থলীও খালি ছিল। গতকাল রোববার সকালে এ বিষয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামসুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, পুলিশ রায়হানের লাশের সুরতহাল যেভাবে তৈরি করেছে আঘাতগুলো উল্লেখ করে সেভাবে আমরাও পেয়েছি ময়নাতদন্তের সময়। তবে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পুনরায় ময়নাতদন্তের আবেদন করায় লাশ তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হয়। শেষের ময়নাতদন্তে তেমন কিছু মিলবে না। কারণ লাশটি পচে গেছে। তবুও আমরা বিষয়টি দেখছি।

এদিকে, রায়হান হত্যায় জড়িতদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে হরতাল-সড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে রায়হানের পরিবার ও বৃহত্তর আখালিয়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

একই সঙ্গে ৬ দফা দাবিও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের মা সালমা বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রায়হানের মামাতো ভাই শওকত। দাবিগুলো হলো

রায়হান হত্যাকা-ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতে হবে। হত্যায় জড়িত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর ভূঁইয়াসহ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।

পুলিশ কমিশনারের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য আসতে হবে। নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন। জড়িতদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার না করলে হরতাল-সড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলন।

অন্যদকে, এসআই আকবরের বিভিন্ন অপরাধের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। শুধু অপরাধই নয় পুলিশের চাকরিবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও অর্থ উপার্জনে আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত নাটকে অভিনয়ে নেমেছিলেন। ইউটিউব চ্যানেল গ্রিন বাংলার হয়ে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নেননি। এসএমপিও তার অভিনয়ের বিষয়ে কিছুই জানেন না।

এ বিষয়ে সিলেট নগর পুলিশের বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, পুলিশের পদবির সঙ্গে পোশাক ব্যবহারের বিষয়ে সরকার অনুমোদিত একটি ‘ড্রেস রুল রয়েছে। ড্রেস রুল অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা র‍্যাংক ব্যাজ ব্যবহার করে পোশাক পরেন। নাটক সিনেমায় পুলিশের নেতিবাচক ও হাস্যরসাত্মক উপস্থাপন জনমনে এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্ম নেয় বলে তিনি মনে করেন। যে কারণে চলচিত্র জগতে পুলিশের পোশাক ব্যবহারের আগে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু এসআই আকবর অনুমতি নিয়ে অভিনয়ে নেমেছেন কি না তা আমার জানা নেই।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অভিনয় জগতে নেমে এসআই আকবরের অধপতন ঘটে। কথায় আছে ‘সঙ্গ দোষে লোহাও জলে ভাসে’। রায়হানকে নির্যাতন করে হত্যার পর বেরিয়ে আসে অভিনয় জগতে জড়িতদের সঙ্গে আখালিয়া এলাকায় রাত-বিরাতে আড্ডা বসানোর বিষয়টি। সেসব আড্ডার মধ্যমণি থাকতেন আকবর। চলত সরাব ও ইয়াবা সেবন। পুলিশ কর্মকর্তা হওয়াতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতেও ভয় পেতেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর ভোররাতে নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর আকবরসহ ৪ পুলিশকে বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর বিকেল থেকে আকবর পলাতক রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রায়হানের লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করে পিবিআই। ওইদিনই বিকেলে আখালিয়া নবাবি মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে লাশ ফের দাফন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close