গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৯ অক্টোবর, ২০২০

হেমন্তেও নেই শীতের আমেজ

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টিতেও কমছে না গরম অস্বস্তিতে রাজধানীর মানুষ

কার্তিক মাস শুরু হলেও এখনো অনুভূত হচ্ছে না শীত। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এবার শীত আসবে একটু দেরিতে। এর কারণ তিনটি চিহ্নিত করেছেন আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ওই তিনটি কারণ হচ্ছে বর্ষা মৌসুম দীর্ঘ হওয়া, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বিরাজ করা এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকা।

পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ুম-লের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় গরম ভাবটা থেকে যাচ্ছে হেমন্তেও। কমে আসছে শীতের কাল।

এদিকে, রাজধানীসহ দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরম। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির দেখা মিললেও গরমের তীব্রতা কমছে না তেমন। গতকাল রোববার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু অনুভব হচ্ছিল প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগের রাতের তীব্র গরমের পর দেশের কোথাও কোথাও বিশেষ করে সাতক্ষীরা ও খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে গতকাল ভোরে বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সকাল ৮টার পর থেকেই আবার প্রচন্ড গরম এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে থাকে। বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি হলেও গরম কমার কোনো লক্ষণ ছিল না।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বজলুর রশীদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এবার দেশে শীত একটু বিলম্বে আসবে বলে মনে করছি। আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনেকটা তাই বলছে। সেই অর্থে বলা যায়, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে মৃদু শীত অনুভূত হওয়া শুরু হবে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এর গতিমুখ ভারতের উড়িষ্যার দিকে। এই নিম্নচাপটি শেষ হতে দুই থেকে তিন দিন লেগে যেতে পারে। এরপর আরেকটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিও বিদায় নিতে নিতে অক্টোবরের ২০-২২ তারিখ লাগতে পারে। তাই এ দুটি নিম্নচাপের পর বলা যায়, হালকা শীত অনুভব করতে শুরু করবে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ। আর নভেম্বরের দিকে দেশজুড়ে শীত জেঁকে বসতে পারে।’

আবহাওয়াবিদ ড. আবদুল মান্নান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গত বছর এ সময়ে যে তাপমাত্রা ছিল, এবার তার চেয়ে একটু বেশি। গত বছরে এ সময়ে শীত অনুভূত হতো কারণ বর্ষা মৌসুম ছিল সীমিত। তিনি বলেন, এ বছর তিনটি কারণে মূলত গরম পড়ছে যা মানুষের কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এর কারণগুলো হচ্ছে বর্ষা মৌসুম এখনো বিদায় না নেওয়া, বায়ুমন্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকা এবং বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বিরাজ করা।

ড. আবদুল মান্নান আরো বলেন, তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির বেশি বিরাজ করছে। আমরা ২৫ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা থাকলে শীত চলে এসেছে বলে ধরে নেই। কিন্তু এখনো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির ওপরে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রা বেশি থাকাও গরম ভাবের একটা কারণ। তিনি বলেন, সাগর এখনো উত্তপ্ত। জলীয় বাষ্প বেশি। ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান বলেন, বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প। এই জলীয় বাষ্পের কারণে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। আর এই ঘামের কারণে একটু গরম পড়লে মনে হয় গরমটা অনেক বেশি। দিনের লম্বা সময় সূর্যের কিরণ ভূপৃষ্ঠে পড়াটাও একটি কারণ। তিনি বলেন, এখন দিনের ব্যাপ্তি বেশ দীর্ঘ। সূর্যের তাপ লম্বা সময় ধরে ভূপৃষ্ঠে পড়ার কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।

সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যকার পার্থক্য না থাকা গরম বেশি অনুভূত হওয়ার আরেকটি কারণ বলে জানান আবহাওয়াবিদ কাওসার পারভীন। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সামান্য বেশি আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি। পার্থক্য ১০ ডিগ্রির কম থাকলে এ রকম অস্বস্তি অনুভব হওয়ার কথা। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সিপিআরডির নির্বাহী শামসুদ্দোহা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর ক্ষতির বিরূপ প্রভাব শুরু হয়েছে। সে কারণেই আবহাওয়ার এই খামখেয়ালি আচরণ। এখন কার্তিক মাস হালকা শীত অনুভূত হওয়ার কথা থাকলেও গরমে মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছে; এটাও জলবায়ুর ক্ষতির বিরূপ প্রভাব ছাড়া আর কিছু নেই।

গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে এটি দুর্বল অবস্থায় আছে। মধ্য বঙ্গোপসাগরে পরবর্তী দুই দিনের মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।

পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুকনো থাকতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close