শাহজাহান সাজু
বিদেশে যাবে বাংলাদেশি পুঁজি : হচ্ছে নীতিমালা
থাকছে অর্থ পাচার রোধে কঠোর বিধান
প্রণয়ন করা হচ্ছে বিদেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগ নীতিমালা। এর আওতায় নির্ধারণ করা হবে কোম্পানির মোট মূলধনের কত শতাংশ বিনিয়োগযোগ্য, এর বিনিময়ে কত টাকা মুনাফা দেশে আসবে। তাছাড়া কোন কোন কোম্পানি বিদেশে বিনিয়োগ করছে, বিনিয়োগের অর্থ শিল্পায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা-এসব বিষয়ে থাকছে জোরদার মনিটরিং ব্যবস্থা। পাশাপাশি এ নীতিমালা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেদিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা রেখেই বিদেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের চিন্তা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়,বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা ঠিক করা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরই মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটি একটি বৈঠক করেছে। সেখানে উল্লিখিত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও সবার জন্য বিদেশে বিনিয়োগ উন্মুক্ত করা হবে না। প্রথমে আবেদনকারী প্রতিটি কোম্পানিকে পৃথকভাবে পর্যালোচনা করে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটির প্রথম বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খলিলুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ নীতিমালায় একটি এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক আবু সালেহ মুহম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিতে পারে। আর এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সালাউদ্দিন আলমগীর বলেন, এখনই যথার্থ সময় বিদেশে বাংলাদেশি বিনিয়োগ নীতিমালা করার। কারণ অনেকে অবৈধ পদ্ধতিতে বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। নীতিমালা হলে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার বন্ধ হবে। সূত্র আরো জানায়,দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতি বাদ দিলে আগের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার। আর যখন প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পায় তখন ধরে নিতে হবে দেশে শিল্পায়ন বাড়ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে এবং অন্যান্য সূচকে ভালো করছে। এক শ্রেণির মানুষের কাছে অর্থ আছে। এসব উদ্যোক্তা এখন বিদেশে বিনিয়োগ করতে চান। পাশাপাশি ভারত, সিঙ্গাপুরসহ অন্য দেশ এ সংক্রান্ত নীতিমালা করে অনেক আগেই উন্মুক্ত করেছে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য। সেই হিসেবে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশি কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক রক্ষণশীল। বর্তমান আইন অনুযায়ী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো চাইলে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। যদিও অভিযোগ রয়েছে, অনুমোদন ছাড়াই অনেকেই অবৈধপথে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছেন।
ওই বৈঠকের সুপারিশে আরো বলা হয়, এ সংক্রান্ত নীতিমালা করার আগে বিদেশে বাজারের চাহিদা জানার প্রয়োজন। আর একই নীতিমালা দিয়ে যেন ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকাসহ সব ধরনের বাজারে প্রবেশ করা যায়। আর একটি কোম্পানি তার কত শতাংশ শেয়ার বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে সেটি স্পষ্ট করতে হবে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুরের নীতিমালা থাকলে সেটি পর্যালোচনা করা দরকার বলে বৈঠকে মতামত দেওয়া হয়।
"