বরগুনা প্রতিনিধি

  ০১ অক্টোবর, ২০২০

স্বজনদের প্রতিক্রিয়া

আমরা সন্তুষ্ট : রিফাতের বাবা

আপিল করব : মিন্নির বাবা

বরগুনার চাঞ্চল্যকর শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যাকা-ে মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহতের বাবা ও মামলার বাদী আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। তবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর। গতকাল বুধবার দুপুরে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এক রায়ে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন। বাকি চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ঘটনার ১৫ মাস পর আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ৬ আসামির সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন তিনি। বাকি ৪ আসামি পেয়েছেন বেকসুর খালাস।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ‘শুরু থেকেই জানতাম, রিফাত হত্যায় মিন্নি ছিল নাটেরগুরু। এই মিন্নির ষড়যন্ত্রেই আমার ছেলের প্রাণ গেছে।’ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মিন্নিসহ ছয় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট।’

১৫ মাস আগে ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে কিশোরগ্যাং নয়ন বন্ড ও তার বন্ধুরা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করলে হাসপাতালে মারা যান রিফাত শরীফ। দেশকে স্তম্ভিত করে দেওয়া এ হত্যাকান্ডের পর পুলিশ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের বিচারে রায় ঘোষিত হলো।

সকাল ৯টার আগে রিফাতের স্ত্রী এ মামলার অন্যতম আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের মোটরসাইকেলে করে আদালতে উপস্থিত হন। মামলার আসামিদের মধ্যে কেবল তিনিই জামিনে ছিলেন। রায়ের আগে মিন্নি তার বাবাকে বলছিলেন, খালাস পাবেন বলেই তার বিশ্বাস। কিন্তু রায়ে তার মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তার বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর দাবি করেন, তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।

রায়ের পর মিন্নির বাবা বলেন, ‘আমরা বিক্ষুব্ধ। এ রায় আমাদের মনঃপূত হয়নি। রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট। আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’

মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামও আপিল করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ।’

তবে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘সাক্ষ্য প্রমাণে আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি বলেই আদাত ছয়জনকে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন।’

এ রায় ঘিরে সকাল থেকে আসামিদের স্বজনরা ও হাজার হাজার উৎসুক জনতা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকেন। বরগুনার সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সন্তোষ প্রকাশ করে এ রায়কে যুগান্তকারী রায় বলে অভিহিত করেছেন। সাংবাদিকদের তারা বলেন, কঠোর বিচার হওয়ায় সমাজে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। অপরাধীরা বুজবে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না।

অপরদিকে আসামিপক্ষ এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। রায় প্রত্যাখ্যান করে আল-কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, এর স্বজনরা আদালত প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নীরব-নিস্তব্ধ আদালত প্রাঙ্গণের বাতাস কিছুক্ষণ স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে যায়। এ রায় তাদের ন্যায় হয়নি এমনটি দাবি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close