প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

যমুনা পদ্মায় পানি হ্রাস, তিস্তা ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে কুশিয়ারা ছাড়া উত্তরাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বুধবার এসব কথা বলা হয়েছে। এদিকে প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, লালমনিরহাটে তিস্তা এবং কুড়িগ্রামের রৌমারিতে ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এবং ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক মডেল অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতীয় মেঘালয় এবং দার্জিলিং অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এই সময়ে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার এবং আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

এদিকে দেশের ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮টির, হ্রাস পেয়েছে ৫৩টির, বিপৎসীমার ওপরে নদীর সংখ্যা এক এবং বিপৎসীমার ওপরে স্টেশনের সংখ্যা একটি।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে, লাটু ১২৫ মিলিমিটার, দুর্গাপুরে ১১৬, মহেশখোলায় ৯৮, চাঁদের বাগানে ৯৬, পটুয়াখালীতে ৮১, কক্সবাজারে ৮১ এবং আত্রাই ৭৪ মিলিমিটার উল্লেখযোগ্য।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের অংশে তিস্তার বাম তীরে ভাঙনে গত কয়েক দিনে নদীতে বিলীন হয়েছে এক গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, ঈদগাঁ মাঠ ও ফসলি জমি।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলার নিচু অঞ্চলগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে আমন খেতে। গত জুনে তিস্তার বাম তীরের ভাঙনের কবলে পড়ে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা। বন্যার পানি কমলেও নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জেলার অনেক নিচু এলাকা। দুই দিন বিরতির পর সোমবার থেকে ফের ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তিস্তার ভাঙনে সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বালাপাড়া ছাড়াও চন্ডিমাড়ী, গোবর্ধন, রজবটারি ও সদর উপজেলার চরগোকুন্ডা গ্রাম। আহলে হাদিস ঈদগাঁ মাঠ, গোবর্ধন ইসমাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান মিজান জানিয়েছেন, তিস্তার ভাঙন থামানোর জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৭৫৯টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে।

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির তীব্র স্রোতে শুরু হয়েছে ভাঙন। ক্রমে পাল্টে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মানচিত্র। বছরের পর বছর নদী ভাঙনে নতুন নতুন গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে পরে সেখানে জেগে উঠছে চর। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গাছপালা বিলীন হচ্ছে নদীতে। বাপ-দাদার ভিটে হারিয়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবারের ঘরবাড়ি, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার দুই পাশে, উঁচুস্থানে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঝুপড়ি তুলে।

ভাঙনের মুখে বিলীন হওয়া গ্রামগুলো হলো রৌমারী উপজেলার ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চরগেন্দার আগলা, ঘুঘুমারী, খেরুয়ারচর, খেদাইমারী, পশ্চিম বাগুয়ারচর, বাইসপাড়া, বলদমারা, পশ্চিম পাখিউড়া ফলুয়ারচর, পালেরচর, ধনারচর, দিগলাপাড়া, তিনতেলী বাগুয়ারচর, বাইটকামারী ধনারচর, দিগলাপাড়া। এমনও ইতিহাস রয়েছে যে, এক একটি পরিবার এক থেকে সাতবার পর্যন্ত নদীভাঙনে শিকার হয়েছে। এ রকম পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ এর অধিক। ভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ না নিলে উপজেলা পরিষদ ভবনসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে উপজেলা শহর রক্ষার জন্য কয়েক দফা কয়েকশ’ কোটি টাকার অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ করলেও বাস্তবে কোনো কাজেই আসেনি। এভাবে চলতে থাকলে রৌমারী উপজেলাটি সম্পূর্ণরূপে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে।

রৌমারীর পালেরচর গ্রামের ছোরমান মাঝি বলেন, আমাদের এক সময় অনেক সহায় সম্পত্তি ছিল। সেইসব এখন নদীর পেটে। রাস্তার ধারে পলিথিন কাগজের ছাপড়া দিয়ে ছেলেপুলে নিয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি।

উত্তর ফলুয়ারচর গ্রামের জব্বার, আছমা বেগম, নুরুন্নবী, হাজেরা, কাওসার, আমজাদ, কছিম, রহমত, আক্কাছ, জবেদ, সামছুল, আকবর, রহিম তারা জানান, নদীভাঙনে বসতবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। প্রতি বছর নদীভাঙনে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। এ নদের বাম তীর রক্ষায় ৪৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকার প্রকল্প টেন্ডার হয়েছে। দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হলে হয়তো আমরা নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাব।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আবদুল্লাহ বলেন, গত এক বছরে রৌমারী উপজেলার প্রায় ১ হাজার পরিবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। ভাঙন রোধ না করলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে রৌমারী নামের উপজেলাটি বিলীন হতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close