হাসান ইমন

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দাম কমছে পেঁয়াজের

* শুল্ক প্রত্যাহার * অনলাইনে বিক্রি * আসছে ভারত মিয়ানমার থেকে

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে আসতে শুরু করেছে বলে জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি বাড়াতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে মন্ত্রণালয়। আর টিসিবির মাধ্যমে অনলাইনে ৩৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে ভোক্তা অধিদফতরের অভিযান চলমান রয়েছে। ফলে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম আরো কমবে। কারণ বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে এবং দেশেও তেমন সংকট নেই।

শুল্ক প্রত্যাহার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পেঁয়াজ আমদানির ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এটা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অনলাইনে পেঁয়াজ : এখন অনলাইনে ঘরে বসেই পেঁয়াজ কেনা যাবে। প্রতি কেজির দাম পড়বে ৩৬ টাকা। অনেক ক্রেতা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আওতায় ট্রাকে করে বিক্রি করা পেঁয়াজ লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে পারেন না। এজন্য অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে টিসিবি। গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ই-কমার্সের আয়োজনে জুম প্ল্যাটফরমে টিসিবির ‘ঘরে বসে স্বস্তির পেঁয়াজ’ বিক্রির কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে বড় ধরনের আমদানি ও সাশ্রয়ী মূল্যে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যারা ট্রাক সেল থেকে কিনতে পারছেন না, তাদের জন্য টিসিবি ই-কমার্সের সহযোগিতায় সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘অন্যান্য পণ্যের মতো এখন সাশ্রয়ী মূল্যের পেঁয়াজও ক্রেতারা বাসায় বসে কিনতে পারবেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রয়ের ধারণাটি নতুন, এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আসতে পারে। আমরা থেমে থাকব না, সমস্যার সমাধান করে এগিয়ে যাব। পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। দেশের অভ্যন্তরে দেশি ও আমদানিকরা পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রেখেছেন।

ভোক্তা অধিদফতরের অভিযান : বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম ঠিক রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত রোববার দেশের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে ৬৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। অভিযানে পেঁয়াজ, আদা,আলু ও চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হয়। এ ছাড়া পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকার সঙ্গে বিক্রয় রশিদের গরমিল, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও পণ্য, নকল পণ্য এবং ওজনে কারচুপিসহ ভোক্তা স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে সারা দেশ ৬৫ প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করেন।

পাইকারিতে কমেছে দাম : ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে পাইকারি বাজারে দফায় দফায় কমছে দাম। তিন দিনে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ২৫ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা।

গতকাল রাজধানীতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা, যা গত রোববার ৬৫-৭০ টাকা। আগের দিন ছিল ৭০-৭২ টাকা। আর আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৬০-৬৫ টাকা।

তবে গতকাল পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে কমেনি। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গত শনিবারের মতো দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকা। আর আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা।

তবে সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধির রিপোর্টে দেখা যায়, পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে কিছুটা কম হলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। গতকাল সৈয়দপুর শহরের আড়ত ও খুচরা বাজার গিয়ে এমনই চিত্র দেখা দেখা গেছে। পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকায় ১০০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। আর খুচরা বাজারে এখনো ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারের মূল্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা না জানলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন চড়া দামেই তারা পেঁয়াজ ক্রয় করেছেন। ভারত থেকে গত শনিবার পেঁয়াজের বেশকিছু চালান আসে, বেশ কিছু পথে। প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, টানা চার দিন বন্ধ থাকার পর গত শনিবার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মাকসুদ খান বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজের ট্রাক দেশে ঢুকেছে। তবে লিও পারমিশন (সব ডকুমেন্ট কমপ্লিট) করা ট্রাকগুলোই দেশে প্রবেশ করতে পারবে। দিল্লি সরকার ভোমরাসহ তিনটি বন্দর দিয়ে ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, লিও পারমিশন করা পেঁয়াজভর্তি ট্রাক রয়েছে ৪০-৪৫টি। তা ছাড়া এগুলো ছাড়াও আরো ১২৫ ট্রাক পেঁয়াজ ভারতে আটকা রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজভর্তি দিনের প্রথম ট্রাকটি গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে প্রবেশ করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম। ট্রাকচালকরা বলেন, এখনো মহদিপুর স্থলবন্দরে প্রায় ৩০০ পেঁয়াজভর্তি ট্রাক আটকে আছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক তৌফিফুর রহমান বাবু জানান, ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে খোলা এলসির বিপরীতে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকে আছে প্রায় দুই শতাধিক ট্রাক। গত শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আটটি ট্রাকে ১৯৯ টন পেঁয়াজ ঢুকেছে।

হিলি প্রতিনিধি জানায়, পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষে তুলে নেওয়ার পাঁচ দিন পর গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, পূর্বের খোলা এলসির বিপরীতে সীমান্তের ওপারে আটকে থাকা যেসব পেঁয়াজের এক্সপোর্ট অনুমতি বা গেট পাস মিলেছে অথচ বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি সেসব পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে প্রায় ৩০ টন মিয়ানমারের পেঁয়াজ গত শনিবার খালাস করা হয়েছে। গত শুক্রবার পেঁয়াজভর্তি মিয়ানমারের একটি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে ভিড়ে। পথে আরো বেশ কয়েকটি ট্রলার টেকনাফ বন্দর অভিমুখে রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close