চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী প্রতিনিধি

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শফীপুত্র আনাসকে বহিষ্কারের দাবিতে উত্তাল হাটহাজারী

দুর্নীতি, অনিয়ম আর কওমি আকিদাবিরোধী কাজ করার অভিযোগে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর পুত্র আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা ও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার দুপুর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় অবরুদ্ধ করে রেখে ও মাদ্রাসা চত্বরে বিক্ষোভ করা হয়। এ সময় শিক্ষকদের রুম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভের পরে তা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে। এদিকে মাদ্রাসা ভেতর থেকে ৫ দফা দাবি সংবলিত একটি লিফলেট পাওয়া গেছে। দাবিগুলো হলো ১. মাওলানা আনাস মাদানীকে অনতিবিলম্বে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ২. ছাত্রদের প্রতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়ন সহকারে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ৩. আল্লামা আহমদ শফীকে মাজুর বা অক্ষম হওয়ায় পরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনক অব্যাহতি দিয়ে পুরস্ত

বা উপদেষ্টা বানাতে হবে। ৪. উস্তাদদের পূর্ণ অধিকার ও নিয়োগকে শূরার কাছে পূর্ণ ন্যস্ত করতে হবে। ৫. বিগত শূরার হক্কানী আলেমদের পুনর্বহাল ও বিতর্কিত সদস্যদের পদচ্যুত করতে হবে।

এই দিকে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে সব ক্লাসের ছাত্ররা মাঠে নেমে আসেন। এ সময় মাইকে উচ্চারিত হয়েছিল বিভিন্ন স্লোগান। ‘আস্থার প্রতিষ্ঠানে আনাস মাদানীর ঠাঁই নাই। অনতিবিলম্বে হাটহাজারী থেকে সরাতে হবে আনাসকে।’ এমন নানা স্লোগান শোনা যায়। ছাত্র সমাজের দাবি দাওয়া নিয়ে লিফলেটও বিতরণ করা হয়। ঘটনার সংবাদে মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ চলে আসে। এতে ছাত্ররা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই দিকে মাদ্রাসার একটি সূত্রে জানা যায়, আনাস মাদানীকে ১০ মিনিটের সময় দেওয়া হয়েছিল রুম থেকে বের হওয়ার জন্য। ১০ মিনিট পার হয়ে গেলে ছাত্ররা তার রুমের সামনে ভিড় জমাতে থাকে। এদিকে একদল ছাত্র জোনায়েদ বাবু নগরীর রুমের সামনে পাহাড়ায় ছিল। বাহির থেকে তালাও লাগানো হয়েছিল। যেন কেউ বাবু নগরীর কাছে পৌঁছতে না পারে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী জানান, কওমি সনদ আমাদের অধিকার। আওয়ামী লীগ সরকার এটা দিয়েছে, তার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু আনাস মাদানী বাবার পরিচয়ে সরকারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও কওমিদের একটি বলয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এছাড়াও সরকার থেকে নানা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনি রাজনীতি করার পাঁয়তারা করছেন। আমরা কওমি আদর্শে যারা আছি তারা কোনো রাজনৈতিক দলের বা গোষ্ঠীর না। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সম্প্রতি একটি ইসলামিক দলের নেতা মামুনুর রশিদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছে আনাস মাদানী। এতে কওমিকে দুই ভাগ করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। যার কারণে আনাস মাদানীর পদত্যাগ দাবিতে তারা বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীরা বলেন, দাবি আদায় না হলে মাদ্রাসার সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, তাদের আদর্শিক এই আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি হলে সব কওমি মাদ্রাসায় আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে। হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রশিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রাজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিসহ পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য।

এছাড়া র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের আওতাধীন হাটহাজারী সিপিসি-২ এর পরিচালকসহ র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি জানার জন্য হাটহাজারী থানার ওসি মাসুদ আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, মাদ্রাসার ফটক বন্ধ করে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মাদ্রাসার সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ, শিক্ষক নুরুল ইসলাম জেহাদী ও মাওলানা আনাস মাদানীর দফতর ভাঙচুর করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে মাঝে মাঝে হেফাজত ইসলামের আমির মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পুত্র হেফাজতের প্রচার সম্পাদক ও মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক মাওলানা আনাস মাদানীর অপসারণ দাবি করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রুহুল আমিন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু মাদ্রাসার ফটক বন্ধ থাকায় তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ বিক্ষোভের কারণে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট খাগড়াছড়ি মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের কোনো সমস্যা হয়নি। তবে চারদিকে মাদ্রাসায় গোলযোগের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিক্ষোভকারীরা মাদ্রাসার ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার মাইকিং করেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-নাজিরহাট খাগড়াছড়ি মহাসড়কে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close