নিজস্ব প্রতিবেদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৯ জুলাই, ২০২০

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা

জড়িতরা দুদকের নজরদারিতে

চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাদের জাতীয়পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত দুই সিন্ডিকেটের প্রায় ৩০ জনকে নজরদারিতে রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে শুরু হয়েছে তাদের সম্পদের অনুসন্ধান। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তা বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন তা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে দুদক। তাদের আশঙ্কা এর মাধ্যমে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। একে একে ফাঁস হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ভোটার করায় জড়িতদের নাম। বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পুরো বিষয়টি শুরু থেকেই অনুসন্ধান চালিয়ে আসছে দুদক। তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মিলেছে দুটি সিন্ডিকেটের প্রায় ৩০ জনের নাম। যার একটির নেতৃত্বে গ্রেফতার হওয়া কর্মচারী জয়নাল, আরেকটির প্রধান এনআইডি প্রকল্পের কর্মকর্তা শাহনুর।

এখন জালিয়াতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সম্পদের তথ্য উদ্ঘাটনে নেমেছে দুদক। যে তালিকায় আছে নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আর কতিপয় জনপ্রতিনিধি।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাই নজরদারিতে আছে।

জালিয়াতির ঘটনায় একটি মামলা করে নির্বাচন কমিশন, যা তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। জিজ্ঞাসাবাদ এবং জবানবন্দিতে তারাও পেয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান, তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকটা জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত সন্দেহে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে কমিশনের এই মামলাটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দুদক। অভিযোগ, নিজেদের রক্ষায় তড়িঘড়ি করে মামলাটি করেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। ব্যাপক অনুসন্ধান কিংবা তদন্তে ফেঁসে যেতে পারেন নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট অনেকেই এমন মত তদন্ত কর্মকর্তাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্র বা পরিচয়হীন রোহিঙ্গারা এনআইডি নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেই। কিন্তু তাদের কারা, কেন, কীভাবে এটা সরবরাহ করছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এ নিয়ে কমিশন এবার তদন্তে নেমেছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার জন্য জন্মসনদ ইস্যুকারী, মা-বাবা পরিচয়ধারী এবং নাগরিক সনদ প্রদানকারীদেরই দুষছে ইসি। কমিশন বলছে, অসৎ জনপ্রতিনিধিদের কারণেই রোহিঙ্গারা এনআইডি পেয়ে যাচ্ছে। আর তা দিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। জানা গেছে, জনপ্রতিনিধি ও ইসির একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগসাজশ করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ইসির প্রতিবেদনেও এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ভোটার হতে রোহিঙ্গাদের স্থানীয়ভাবে কেউ না কেউ সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে ভোটার হওয়ার আগে রোহিঙ্গারা কীভাবে অনলাইনে জন্মসনদ এবং চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর থেকে নাগরিক সনদ পাচ্ছেন তার তদন্ত জরুরি। পিরোজপুরে আটক রোহিঙ্গা নিজের বাবা-মাও বানিয়ে ফেলেছেন। এই ঘটনাটি কমিশন সিরিয়াসলি নিয়েছে। বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ডেটাবেজে নাম থাকার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে ভোটার হলো তা-ও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত থাকবে কাউকে ছাড় দেব না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close