নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ এপ্রিল, ২০২০

করোনায় ভোগাচ্ছে চাল ডাল, সবজিতে স্বস্তি

* টমেটোর কেজি ১০* বাজারে অভিযান

করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের দাম বেশ ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। তবে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে সবজি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালো মানের টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। সজনের ডাঁটা বাদে বাকি সবজি ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্ক থাকলেও রাজধানীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি আসছে। তবে ঢাকায় বসবাসকারীদের একটি বড় অংশ গ্রামে অবস্থান করছেন। ফলে সবজির চাহিদা তুলনামূলক কম। এ কারণে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে সবজি।

এদিকে, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে এখন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। তাই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর পাইকারি বাজার ও আড়তে অভিযান পরিচালনা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়ৎ ও পাইকারি বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার ম-ল।

তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিমের মাধ্যমে শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজের আড়তে অভিযান চালানো হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। তাদের কাছে পেঁয়াজের ক্রয় রশিদ চাওয়া হয়। কিন্তু তারা ক্রয় রশিদ দেখাতে পারেননি। আবার অনেকে দেখাতে রাজিও হননি। তার মানে প্রতিষ্ঠানগুলো অনৈতিকভাবে বাজারের সংকট সৃষ্টি করে বেশি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। তাই মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করে কারসাজির মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর অপরাধে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ভেদে টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। কারওয়ানবাজারে ভালো মানের টমেটোর কেজি ১০ টাকা বিক্রি করা আলম বলেন, এখন বাজারে টমেটোর সরবরাহ অনেক। খেতের টমেটো পেকে যাচ্ছে। আর টমেটো পেকে গেলে তা খেতে রাখার উপায় নেই। যে কারণে চাষিরা দাম না পেলেও টমেটো বাজারে নিয়ে আসছেন। শুধু টমেটো না, এখন সব ধরনের সবজিই তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

কারওয়ানবাজারে যে টমেটোর কেজি ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে সেই মানের টমেটো খিলগাঁও বাজারে ২৫ টাকা। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মিলন বলেন, কারওয়ানবাজারের সঙ্গে এখানকার দাম মেলালে হবে না। কারওয়ানবাজার থেকে মাল আনতে আমাদের গাড়ি ভাড়া আছে, এখানে দোকান ভাড়া আছে। সব খরচ যোগ করলে দেখা যাবে আমরা সীমিত লাভেই সবজি বিক্রি করছি।

এদিকে টমেটোর মতোই তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। তবে সজনের ডাঁটার দাম এখনো বেশ চড়া। গত কয়েক দিনের মতো সজনের ডাঁটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। এছাড়া করলা ২০-৪০, বরবটি ৪০-৫০, শসা ২০-৩০, পেঁপে ৩০-৪০, শিম ৩০-৪০, গাজর ২০-৩০, বেগুন ২০-৪০, পটোল ৪০-৫০, ঝিঙা ৪০-৫০, চিচিংগা ২০-৩০, ঢেঁড়স ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকার মধ্যে।

সবজির দামে স্বস্তি দেখা দিলেও চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের দাম বেশ ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৮ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকা কেজি। আর করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে ছিল ৫২-৫৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ চিকন চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে আট টাকা এবং মাসের ব্যবধানে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ার এই তালিকায় রয়েছে মাঝারি মানের পায়জাম ও লতা চালও। বর্তমানে মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০-৫৫ টাকার মধ্যে। আর এক মাস আগে ছিল ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে।

এদিকে গরিবের মোটা চালের দাম চলতি সপ্তাহে নতুন করে না বাড়লেও গত সপ্তাহেই বেড়ে যায়। বর্তমানে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৫০ টাকা কেজি, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩৮-৪০ টাকা। আর করোনাভাইরাস আতঙ্কের আগে ছিল ৩২-৩৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৫৫-৬০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। তার আগের সপ্তাহে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। এ হিসাবে দুই সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। করোনা ভাইরাস প্রকোপের মধ্যে লুজ সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর এক লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।

পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা ব্যবসায়ীরা এখন প্রতি কেজি লুজ সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ৯৫-১০০ টাকা। যা আগেও ছিল ৮০-৮৫ টাকা। ভালো মানের পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা, যা আগে ছিল ৭৫ টাকার মধ্যে। সাধারণ পাম অয়েল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৭০ টাকা। আর এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা, যা আগে ছিল ১০০-১১০ টাকা। বড় দানার মসুরের ডাল খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৭৫-৮৫ টাকা, যা আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা। আর ছোট দানার মসুরের ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০-১০৫ টাকার মধ্যে।

দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে অ্যাংকর, ছোল ও মুগ ডাল। বাজার ও মানভেদে অ্যাংকর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি। আর ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুগ ডালের দাম বেড়ে ১৪০-১৫০ টাকা হয়েছে।

কারওয়ানবাজার থেকে সবজি কেনা আসলাম বলেন, সবজি তুলনামূলক কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজেই তো সর্বনাশ করে দিচ্ছে। দিনের পর এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্ক, অন্যদিকে সবকিছুর বাড়তি দাম। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সংশ্লিষ্টদের উচিত দ্রুত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া। তা না হলে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেলেও মরলেও মানুষ না খেয়ে মরবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close