নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ এপ্রিল, ২০২০

এবার হালে নেই ‘হালখাতা’ও

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলা নববর্ষের সব আয়োজন এবার মাটি হয়ে গেছে। বাংলা সনের প্রথম দিনটিতে ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ‘হালখাতা’ আয়োজনও এবার হালে পানি পাচ্ছে না। ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় কোথাও এবার হালখাতা খুলছেন না ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন স্বর্ণ, মনোহারি ও কাপড়সহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পুরোনো বছরের হিসাবনিকাশ হালনাগাদ করে নতুন করে হিসাবের খাতা খোলেন, যাকে বলা হয় ‘হালখাতা’। যুগের পরিবর্তনে হালখাতার সেই ঐতিহ্য অনেক আগেই আবেদন হারিয়েছে। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় ব্যবসায়ীরা পুরোনো রীতি মেনে চলার চেষ্টা করলেও এবার করোনাভাইরাস তা আর হতে দিচ্ছে না। পুরান ঢাকার ইসলামপুর, চকবাজার, শাখারীবাজার ও তাঁতিবাজার, বাংলাবাজার, শ্যামবাজার ও নরসিংদীর বাবুরহাটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ‘হালখাতা না খোলার বেদনা’র কথা।

শাখারীবাজারের শঙ্খভা-ারের মৃনাল কুমার সেন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, লেনদেনও বন্ধ। ব্যবসাই নেই, হালখাতা খুলব কীভাবে? মনে হচ্ছে শনি আমাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। বছর শুরু হচ্ছে, ব্যবসার যাত্রাটাই করতে পারছি না। আমরা যারা ব্যবসায়ী বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায় জড়িতদের জন্য এটা কত দুশ্চিন্তার, কত উৎকণ্ঠার তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

দেশীয় কাপড় বেচাকেনার সবচেয়ে বড় বাজার নরসিংদীর বাবুরহাটের মেসার্স ব্রাদার্স ক্লথ স্টোরের ব্যবস্থাপক রোকনউদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শত শত কোটি টাকার লোকসান আমাদের গুনতে হচ্ছে। কীভাবে যে তা পূরণ হবেÑ আমরা কেউ বলতে পারছি না। সারা দেশ থেকে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা কাপড় কিনতে আসেন এখানে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বিজনেস এখানে। করোনা সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে। পুরান ঢাকার ইসলামপুর হচ্ছে কাপড়ের পাইকারি বাজার। দেশি-বিদেশি সব ধরনের কাপড়ই মেলে এখানে। গতকাল সোমবার ইসলামপুরে গিয়ে দেখা গেল, দোকানপাট বন্ধ, মানুষজনও নেই।

মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা কাপড় ব্যবসায়ী হাজী হারিস উদ্দিন বলেন, হালখাতার নাম শুনলে চোখের সামনে ভেসে উঠে একটা লাল রঙের মোটা খাতা। বছরে পর বছর পহেলা বৈশাখের দিন এই খাতার ছবি সব বাঙালির খুব চেনা। আমিও উত্তরাধিকার সূত্রে এই হালখাতা সংস্কৃতি মেনে ব্যবসা করছি, আমার বাবা করেছেন, দাদাও করেছেন। বাবার কাছ থেকে শুনেছি, প্রথম দিকে হালখাতায় ব্যবহার হতো ‘খেরোর খাতা’। এই খেরোর খাতা তৈরি হতো মোটা লাল রঙের কাপড় দিয়ে। লাল রং যেহেতু শুভ হিসেবে মনে করা হয়, তাই এই খাতায় লাল রঙের ব্যবহার হতো। পহেলা বৈশাখে পূজা দিয়ে এই খেরোর খাতার শুভারম্ভ হতো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন গ্র্যাজুয়েট বইয়ের সুকুমার সরকার বলেন, পুরোনো হিসাব হালনাগাদ করার আয়োজনই হলো হালখাতা। সেদিন মধুর হয়ে ওঠে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের রসায়ন। ঐতিহ্যের এই আয়োজন ধরে রাখতে ক্রেতার আগ্রহে প্রতি বছর সাড়া দিতে উন্মুখ থাকেন বিক্রেতারাও। আপনি যদি গত বছর এই সময় পুরান ঢাকার বাংলাবাজা, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর কিংবা শাখারীপট্টিতে যেতেন, দেখতেনÑ অনেক দোকানে গুছিয়ে রাখা হয়েছে লাল কাপড়ে মোড়ানো হালখাতাটি। পাশেই থাকত টালি খাতা। তিনি জানান, প্রতি বছর বাংলাবাজারের পুস্তকের দোকান এবং ফুটপাতে বৈশাখ মাস আসার দুই সাপ্তাহ আগে থেকেই হালখাতা ও টালিখাতা বিক্রির ধুম পড়ত। বিভিন্ন জেলা থেকে এসেও অনেক এই খাতা কিনে নিয়ে যেতেন। এবার লকডাউনের কারণে প্রেস ও বাইন্ডিং মেশিন বন্ধ থাকায় হালখাতা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close