বিনোদন প্রতিবেদক
৯০ পেরিয়ে অভিনেতা আরিফুল হক
এ দেশের মঞ্চনাটক, টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রাঙ্গন যাদের অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন আরিফুল হক। বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করলেও মাঝে মাঝে মনের টানেই দেশের মাটিতে ছুটে আসতেন তিনি। সর্বশেষ তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরপর আর শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয় বিধায় তার আর দেশে আসা কোনোভাবেই সম্ভব হয়নি।
কথায় কথায় আরিফুল হক একটি কথা এখন প্রায়ই বলেন, ‘আর মায়ায় জড়াতে চাই না, কারণ জানি না আর দেখা হবে কী না এ দেশের মানুষের সঙ্গে, এ দেশের মাটির ধুলোর পথে আর হাঁটা হবে কী জানা নেই, এ দেশের দর্শকের জন্য অভিনয় করা হবে কি না- তাও জানা নেই। তাই দেশে ফিরলে এমন ভাবনায় কেঁদে উঠে মন। মানুষ হয়ে এসেছি পৃথিবীতে, জানি চলে যেতে হবেই একদিন। কিন্তু বয়স, সময় সব মিলিয়ে যখন বারবার জানান দেয় চলে যাওয়ার সময় এসেছে, তখন আর মন চায় না এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে। বারবার সেই প্রিয় মুখগুলোর কাছেই থেকে যেতে মন চায়।’
১৯৩৪ সালের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন আরিফুল হক, ভারতের হাওড়ায়। আগামীকাল তিনি ৯০ বছর পূর্ণ করে ৯১-এ পা রাখবেন। একজন আরিফুল হকের অভিনয়ে দর্শক হেসেছেন, তার অভিনতী চরিত্রের গভীরে দর্শক প্রবেশ করে কেঁদেছেন আবার তার অভিনীত খল চরিত্রগুলো দর্শককে ভাবিয়ে তুলেছেন যে তিনি এমন চরিত্রেও অভিনয় করতে পারেন! একজন সত্যিকারের পরিপূর্ণ অভিনেতার সফলতা এখানেই যখন তিনি বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন। গুণী এই চলচ্চিত্রাভিনেতা সর্বশেষ এ কে এম ফিরোজ বাবু পরিচালিত ‘প্রেম বিষাদ’ এবং প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত ‘গহীনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘উত্তরায়ণ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এটি নির্মাণ করেছিলেন বিভূতি লাহা। বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই সেই অভিনেতা যিনি উত্তমকুারের সঙ্গে একই চলচ্চিত্রে একই ফ্রেমে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
আরিফুল হক অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে ‘লালন ফকির’, ‘সারেং বউ’, ‘বড় বাড়ির মেয়ে’, ‘সূর্য কন্যা’, ‘সুন্দরী’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কথা দিলাম’, ‘নতুন বউ’, ‘এখনই সময়’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘তোমাকে চাই’ ‘দেশপ্রেমিক’, ‘ঘৃণা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ ইত্যাদি।’ ছোটবেলায় নিজেকে একজন সংগীতশিল্পী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন আরিফুল হক। তাই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তিনি কলকাতার ‘দক্ষিণী’ সংগীত বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পন্ন করেন। উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নিয়েছিলেন বিভিন্ন ওস্তাদের কাছ থেকে। নজরুলসংগীতে তালিম নিয়েছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কাকার কাছে। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসেও স্বপ্ন ছিল নিজেকে সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু অডিশন দেওয়ার পর নানা জটিলতার কারণে তা আর হলো না। একসময় টেলিভিশনে অভিনয়ের সুযোগ আসে। এরপর থেকে অভিনয়েই নিজেকে জড়িয়ে নেন সরকারি চাকরি করার পাশাপাশি।
"