বিনোদন প্রতিবেদক

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শুভ জন্মদিন কনকচাঁপা

আজ বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের নন্দিত-জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনকচাঁপার জন্মদিন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই গুণী সংগীতশিল্পী নিজেকে সব সময় একজন কণ্ঠশ্রমিক হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েই তিনি শ্রোতা দর্শকের ভালোবাসার কনকচাঁপায় নিজেকে পরিণত করেছেন। ১৯৯৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশে যতগুলো ছবি হয়েছে প্রায় সবগুলো ছবিতেই ছিল কনকচাঁপার কণ্ঠের উপস্থিতি। বিশেষ করে শাবনূরের ছবি মানেই ছিল কনকচাঁপার গান। শাবনূরের কণ্ঠের সঙ্গে কনকচাঁপার কণ্ঠের অনেকটা সাদৃশ্যতার কারণেই সে সময় কনকচাঁপাকে দিনে চার/পাঁচটি গানও রেকর্ড করতে হয়েছে।

গুণী এই সংগীতশিল্পীর এবারের জন্মদিন নিয়ে নেই কোনো উচ্ছ্ব¡াস। নেই কেক কাটাকাটি- এমনটাই জানালেন তিনি। নিজের জীবনের সেরা জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কনকচাঁপা বলেন, ‘আমার দাদার নিয়মিত তিনটি খরচের হিসাবের খাতা ছিল। সেই হিসাবের খাতার একটি আমি দাদির কাছ থেকে নিয়েছিলাম। সেখানে একটি স্থানে লেখা ছিল. তারপর আজিজা অর্থাৎ আমার দাদি অসুস্থ হলেন। ১৯৩৩ সাল, ২৭ অক্টোবর, সোমবার, আমার তৃতীয় খোকার জন্ম হইলো, লেপের তোলা ৭ আনা। এভাবে আমি আমার বাবার জন্ম সাল, তারিখ বের করেছিলাম, যা বাবার কখনোই জানা ছিল না। বিগত ২০ বছরেরও আগের ঘটনা এটি। তখন আমার বাবা আমার এক জন্মদিনে এক ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি একটি কাগজে লিখেছিলেন, তুমি আমার মেয়ে এটা সত্য কিন্তু তুমি আমাকে আবিষ্কার করেছো আমার জন্ম সাল তারিখ খুঁজে বের করে। এ যেন মেয়ের পেটে বাবার জন্ম। বাবার এই কথাটা আমার আজীবন মনে থাকবে।’

কয়েক বছর আগে কনকচাঁপার জন্মদিনে তার ছেলে মাশুক তার চাকরির এক মাসের বেতনের পুরো টাকাটা তাকে দিয়েছিলেন। ছেলের কষ্টের সেই টাকা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন তিনি বারবার। এটা মা হিসেবে কনকচাঁপার অনেক আবেগ জড়ানো শান্তির একটি বিষয় ছিল। ২০১৬ সালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে কনকচাঁপার প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘দ্বিধার দোলাচল’ সফলতার সঙ্গে শেষ হয়। ‘দ্বিধার দোলাচল’কে ঘিরে তার মনের গহিন কোনে জমা রয়েছে টুকরো টুকরো ভালোবাসার গল্প। দ্বিধার দোলাচল উদ্বোধন করেন আলোকিত মানুষ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। কনকচাঁপা তার আঁকা ছবিগুলোর জন্য প্রশংসিত হচ্ছিলেন গ্যালারিতে আসা দর্শকের কাছ থেকে। প্রদর্শনীটি উৎসর্গ করা হয়েছিল প্রয়াত চিত্রশিল্পী ও পরিচালক খালিদ মাহমুদ মিঠুকে। কনকচাঁপার সর্বশেষ একক অ্যালবাম ছিল ‘পদ্মপুকুর’ যা লেজার ভিশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। আলাউদ্দিন আলীর সুরে ‘বিধাতা’ চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে একজন প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কনকচাঁপার যাত্রা শুরু হয়। এরপর দিলীপ বিশ্বাসের ‘অস্বীকার’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। কিন্তু বেশ কিছুটা সময় পর সালমান শাহ-শাবনূরের প্রথম চলচ্চিত্র ‘তুমি আমার’-এ আবু তাহেরের সুরে ‘দেখা না হলে এক দিন, কথা না হলে এক দিন এবং তুমি আমার ভালোবাসার গান’ এই দুটি গানে আগুন এবং শেখ ইশতিয়াকের সঙ্গে কনকচাঁপা তার গায়কীর শৈল্পিকরূপ দিয়ে এ দেশের গানপাগল মানুষের মাঝে আলোড়ন সুষ্টি করেন। এই দুটি গানই কনকচাঁপার জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের রচনা করে। গান দুটি সুপার ডুপার হিট হয়ে যাওয়ার কারণে সে সময়ের সফল চলচ্চিত্র নির্মাতারা খুঁজতে শুরু করেন কনকচাঁপাকে। একসময় খুঁজে পাওয়া গেল তাকে। এর পরপরই দেশীয় চলচ্চিত্রে শুরু হলো প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কনকচাঁপার এক ভিন্ন অধ্যায়।

বাবা আজিজুল হক মোর্শেদের কাছেই প্রথম সংগীতের হাতেখড়ি। তার পর বাংলা সংগীতের মহারথী প্রয়াত সংগীতশিল্পী বশীর আহমেদ এবং স্বনামধন্য সুরকার (স্বামী) মইনুল ইসলাম খানের কাছে সংগীতে তালিম নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন এই সুরের পথিক। চলচ্চিত্র, আধুনিক গান, নজরুলসংগীত, লোকগীতিসহ প্রায় সব ধরনের গানে তিনি সমান পারদর্শী।

কনকচাঁপার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘ছোট্ট একটা জীবন নিয়ে পৃথিবীতে কেন বলো আসা’, ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘আমার নাকেরই ফুল বলে যে তুমি যে আমার’, ‘এমন একটা দিন নাই’, ‘কোন কাননের ফুলগো তুমি’, ‘বিধাতা গড়েছে আমাকে’, ‘চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ইত্যাদি।

সিনেমায় কনকচাঁপা তিন হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close