বিনোদন প্রতিবেদক
যদি ফিরে আসতেন সালমান শাহ
বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস সৃষ্টিকারী নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দেখতে দেখতে তার মৃত্যুর ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো আকাশচুম্বী জনপ্রিয়। এখনো টিভির পর্দায় তার সিনেমা প্রচার+হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। এখনো তার অভিনীত সিনেমার গান টিভিতে প্রচার হলে তা দর্শক এড়িয়ে যেতে পারেন না। এমনও দেখা গেছে পাশাপাশি দুটি চ্যানেলের একটিতে নতুন কোনো সিনেমা আবার অন্যটিতে সালমান শাহ’র সিনেমা প্রচার হচ্ছে। তখন দর্শক যেন সালমান শাহ’র সিনেমা দেখার প্রতিই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন। আবার শুধু সালমান শাহ’র সিনেমার ক্ষেত্রেই এমন দেখা গেছে, নারী-পুরুষ দর্শক শুধু সালমান শাহ’র পারফরম্যান্সই বেশি উপভোগ করেন। তার সঙ্গে কে আছেন তা কখনোই জরুরি কোনো বিষয় নয় দর্শকের কাছে। মৃত্যুর এত বছর পরও সালমান শুধু তার দুর্দান্ত অভিনয় এবং ফ্যাশনে ভিন্নমাত্রা দিয়েই আজও দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছেন। সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ’র জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায়। যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউজ’। তার নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানও তাই সেই নানার কারণেই আসা। স্কুলে পড়ার সময় সালমান শাহ বন্ধুমহলে সংগীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন।
১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাস করেছিলেন। চলচ্চিত্রে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ছিলেন সামিরা হক। যদিও বা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয় করেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান সালমান শাহ। কিন্তু তার আগেই তিনি নাটকে অভিনয় করেন। মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ’র অভিনয় জীবন শুরু হয়। ওই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে তৌকীর আহমেদ অভিনয় করলেও সালমান শাহ’র চরিত্রটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
পরবর্তীতে আরো বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেও দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন সালমান। সিনেমার পাশাপাশি নাটকেও তার উপস্থিতি দর্শকের মধ্যে ভীষণ সাড়া ফেলেছিল। যদিও বা মৌসুমীর সঙ্গে সিনেমাতে সালমানের অভিষেক হয়। পরবর্তী সময়ে মৌসুমীর সঙ্গে আরো দুটি সিনেমা ‘স্নেহ’, ‘অন্তরে অন্তরে’তে অভিনয় করলেও আর কোনো সিনেমাতে তাদের দেখা যায়নি। শাবনূরের সঙ্গেই বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ। যে জুটিকে এখনো সিনেমার অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সালমান শাহ’র সঙ্গে জুটি হয়ে আরো অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।
সালমানের মৃত্যুর এত বছর পরও বাংলা সিনেমাতে অনেক নায়কের আবির্ভাব হলেও অভিনয় আর ফ্যাশন দিয়ে আর কোনো নায়ক আজ পর্যন্ত সালমান শাহ’র জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি, অনেক চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিচালকের ভাষ্যমতে সালমান শাহ ছিলেন ধূমকেতুর মতো, এলেন দেখলেন জয় করলেন আবার চলেও গেলেন। কোনো নায়কের মৃত্যুর এত বছর পরও ভক্তদের হৃদয়ে এতটা ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোনো দেশের কোনো নায়কের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। যে সময় সালমান মৃত্যুবরণ করেন, সে সময় যারা ছোট ছিলেন, তাদের কাছেও ছোটবেলার গল্পের বিষয় ছিলেন সালমান শাহ। তারাও মনে মনে স্বপ্ন দেখেন, ইশ! যদি একবার ফিরে আসতেন সালমান শাহ। কিন্তু মৃত্যুই সত্য, যে চলে যাবার সে চলেই যায় আর ফিরে আসে না কোনো দিন।
"