বিনোদন প্রতিবেদক
শুভ জন্মদিন গানের পাখি
ভারতীয় উপমহাদেশ কিংবা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এক অবিসংবাদিত কণ্ঠশিল্পী তিনি। বাংলা শাস্ত্রীয়, লোক, আধুনিক কিংবা চলচ্চিত্রের নেপথ্য গায়িকা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় জীবন্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমীন। আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন স্বর্ণঝরা কণ্ঠের অধিকারী এই শিল্পী। সাবিনা ইয়াসমীন এমনই একজন সংগীতশিল্পী শুধু দেশের গানেই তার যে বিরাট অবদান, তা দিয়েই তিনি এই বাংলার বুকে বেঁচে থাকবেন শত শত বছর। বছর জুড়ে বিভিন্ন সময়ে তার গাওয়া দেশের গান আমাদের পুলকিত করে, অনুপ্রাণিত করে, আন্দোলিত করে। আর দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তার গাওয়া দেশের গানই যেন আগামী দিনে নতুন করে পথচলার সাহস জোগায়। দেশের গান ছাড়াও চলচ্চিত্রে হাজার হাজার গান গেয়েছেন তিনি। আর এমনি করেই গানে গানে সাবিনা ইয়াসমীন হয়ে উঠেছেন এ দেশের তথা বাংলা ভাষাভাষীর অতি প্রিয় একজন শিল্পীতে- একজন জীবন্ত কিংবদন্তিতে।
নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। বাসা থেকে কোথাও যাচ্ছি না। বাসাতেই সময় কাটবে আমার। এখন দেশের যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই আসলে জন্মদিন উদযাপনেরও তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এখন সময়টা অন্যরকম। এখন দেশ গড়ার সময়, নতুন করে দেশটা ঠিকঠাকভাবে গড়ে তোলার সময়। সবকিছু স্বাভাবিক হোক, তখন না হয় নিজের জন্মদিন উপলক্ষে কিছু একটা করা যেতে পারে। আপাতত সবার দোয়া চাই, আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন। আর সবাই যেন ভালো থাকেন নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে আমিও এই দোয়া করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘জন্মদিন এলেই আব্বা, আম্মা এবং আমার বোনদের খুব মিস করি। কিন্তু তারপর সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। ঈদ এলে যেমন নতুন জামা-কাপড় লুকিয়ে রাখতাম। জন্মদিন এলেও তাই করতাম। জন্মদিনে এসব কাপড় বের করতাম। আনন্দটাই ছিল অন্যরকম। পরিবারের মধ্যকার সেই আনন্দটা মিস করি।’
এদিকে প্রয়াত বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সংগীত পরিচালনায় এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন সাবিনা ইয়াসমীন। তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায় আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ সর্বোচ্চ ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে প্রমোদকার (খান আতাউর রহমানের ছদ্ম নাম) পরিচালিত ‘সুজন সখী’ সিনেমায় গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘চন্দ্রনাথ’, মইনুল হোসেনের ‘প্রেমিক’, বুলবুল আহমেদের ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, আমজাদ হোসেনের ‘দুই জীবন’, কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’, মতিন রহমানের ‘রাধা কৃষ্ণ’, মোহাম্মদ হোসেনের ‘আজ গায়ে হলুদ’ ও চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে নঈম গহরের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমীনের গাওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিল। জীবনে প্রথম তিনি কবরী পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘এই তুমি সেই তুমি’র সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
"