বিনোদন প্রতিবেদক

  ১২ এপ্রিল, ২০২১

আমার মন মানে না...

একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের নন্দিত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক। রবীন্দ্রসংগীতের জন্যই তার এত জনপ্রিয়তা, এত অর্জন। সেই নন্দিতশিল্পী আর আমাদের মাঝে নেই। অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর হৃদয় শূন্য করে রবিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি।

মিতা হকের জন্ম ১৯৬২ সালে। তিনি প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী।

১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় মিতা হকের প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’। সংগীতায়োজনে ছিলেন সুজেয় শ্যাম। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার প্রায় ২০টি অ্যালবামের বেশির ভাগই প্রকাশিত হয়েছে কলকাতা থেকে। ‘সুরতীর্থ’ নামে একটি গানের স্কুলও রয়েছে তার।

মিতা হক বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সংগীত পরিবেশন করেছেন। তার মোট ২৪টি একক অ্যালবাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে।

সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার মিতা হককে একুশে পদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া শিল্পকলা পদক, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার, চ্যানেল আই রবীন্দ্র মেলা পুরস্কার এবং ভারত থেকে অনেক সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তবে মানুষের ভালোবাসাকে জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার বলে অবহিত করতেন এই কণ্ঠশিল্পী।

জীবনের প্রথম অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত

রবীন্দ্রসংগীতে যে শিল্পীর এত এত অর্জন, সেই মিতা হক কি না জীবনের প্রথম স্টেজ অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত গেয়েছিলেন! তার মিতা গাওয়া সেই নজরুলসংগীতটি হলো ‘নাচে ইরানি মেয়ে’। এক সাক্ষাৎকারে প্রথম স্টেজ অনুষ্ঠানের কথা জানতে চাইলে তিনি এই তথ্য জানান।

মিতা হক বলেছিলেন, “আমি প্রথম স্টেজে গান করি পাঁচ-ছয় বছর বয়সে। প্রথম স্টেজ অনুষ্ঠানে একটা বড় উঁচু টেবিল দিয়ে তার ওপরে আমাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে গেয়েছিলাম একটা নজরুলগীতি ‘নাচে ইরানি মেয়ে’।”

তিনি আরো বলেছিলেন, ‘সেই অনুষ্ঠানটি হয়েছিল এখনকার আড়ংয়ের পেছনে, নিউ কলোনিতে। ওই ফ্ল্যাটে আমরা উঠেছি আমার জন্মের পরের বছর ১৯৬৩ সালে। আমার বাড়ি তো গানের বাড়ি। নানাবাড়িতে গান, দাদাবাড়িতে গান। আমি তখনো মা-বাবার একমাত্র সন্তান। মা-বাবা তো ভীষণ খুশি। আশপাশের প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়াও ছিল অনেক মজার। তখনকার বাঙালি সমাজটা ছিল প্রকৃত বাঙালি সমাজ। মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রেম, শ্রদ্ধাবোধ এবং সহমর্মিতা ছিল। যখন ড্রয়িং রুমে বসে ওস্তাদজির কাছে গান শিখতাম, তখন জানালার পাশে সব ফ্ল্যাটের মানুষ আমাকে দেখত, দাঁড়িয়ে থাকত।’

তারকাদের শোক

মিতা হকের মৃত্যুতে এরই মধ্যে সামাজিকমাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন তারকারা। তার প্রিয় শিষ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অণিমা রায় লিখেন, ‘মিতা আপা। গুরু আমার। আমি তো কাঙ্গাল হয়ে গেলাম।’

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লেখেন, ‘উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক। আমাদের প্রাণের মানুষ, মিতা আপা। চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। আর কোনো দিন দেখতে পাব না। শুনতে পাব না আপনার গান। গভীর শ্রদ্ধা।’

অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর লেখেন, ‘আমার চোখে পুরো বিশ্বের বুকে যেই শিল্পীর গান এবং ব্যক্তিত্ব সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়, যার গান শুনে আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় সেই বরেণ্য সংগীতশিল্পী, শিক্ষক মিতা হক একটু আগে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আপা আপনি ভালো থাকবেন।’

ঊর্মিলা আরো লেখেন, ‘আপনি সব সময় আমার প্রিয় শিল্পী ছিলেন আর আজীবন থাকবেন। দেখা হবে হয়তো অন্য কোনো দেশে, অন্য কোনোভাবে। ঈশ্বর আপনাকে ভালো রাখুক। আমি তোমাকে অসংখ্যভাবে ভালোবেসেছি, অসংখ্যবার ভালোবেসেছি, এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালোবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সব সময়।’

সংগীতশিল্পী, সংগীত পরিচালক আশিকুজ্জামান টুলু লেখেন, ‘মিতা হক চলে গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বিশ্বাস করা সম্ভব না।’

সংগীতশিল্পী নবনীতা চৌধুরী লিখেছেন, “আমার ‘চিরবন্ধু, চিরনির্ভব’ মিতা হক আর নেই। ‘চিরপ্রীতি সুধানির্ঝর তুমি হে হৃদয়েশ’। কীভাবে বিদায় বলি তাকে! আমি শোকগ্রস্ত। গভীর শোক আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। সে চলে গেল, বলে গেল না... সে কোথায় গেল ফিরে এলো না। সে যেতে যেতে চেয়ে গেল, কী যেন গেয়ে গেল... তাই আপন মনে বসে আছি কুসুমবনেতে।”

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close