বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দূর করতে হবে
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশচুম্বী- এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। পণ্য সংকট, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা এমন অসংখ্য অজুহাতকে সামনে নিয়ে আসেন। এসব কারণে না হয় আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বাড়তে পারে, কিন্তু ডলারের সংশ্লিষ্টতা নেই এবং দেশে উৎপাদিত হয় এমন পণ্যের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, বাজার মনিটরিংয়ে ঘাটতি ও বিপণন ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে। এক তথ্যে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজ, দেশি রসুন, আলু ও মোটা চালের দাম ৩ বছরের ব্যবধানে ২০ থেকে ২২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আলুর দাম কেজিতে ১২০ থেকে ১৫০ শতাংশ বেড়ে মানভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১০০ থেকে ১১৮ শতাংশ দাম বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। দেশি রসুনের দাম কেজিতে ১৮৭ থেকে ২২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায় এবং মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৯ শতাংশ বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি দেশের বাজারে আলু রেকর্ড দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকায় উঠেছিল। বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আমদানি শুরু হওয়ায় দাম কিছুটা কমলেও এখনো ক্রেতার নাগালের বাইরেই রয়েছে আলু।
কয়েক বছর ধরে সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কিছু কিছু পণ্য আছে গত ২ বছরে দাম অন্তত সাত-আটবার করে বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কিছু দেশীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, টিসিবি এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টেনে রাখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে পণ্য আমদানি করেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারব্যবস্থায় বর্তমানে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা নেই। দেশে উৎপাদিত পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূলত বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক মুনাফার উদ্দেশ্যে সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করলেও তা কার্যকর করছেন না। এমনকি অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট কাটছেন। অতি মুনাফার লোভে অনৈতিক ও বেআইনিভাবে পণ্যদ্রব্য মজুদ করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা জঘন্য অপরাধ। উচ্চ দামের কারণে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। এভাবে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে খাদ্যতালিকা কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
যেসব অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তদারকির মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। সার্বিকভাবে বাজার যেন যথাযথভাবে পরিচালিত হয়, সেদিকে সরকারের নজর থাকা উচিত। একই সঙ্গে আমদানিকারক, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতাদের যথাযথ নজরদারির আওতায় আনতে হবে।
"