অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন খাত
দেশের পর্যটন খাতের ওপর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে মহামারি কারোনাকালে। তখন গভীর সংকটে পড়েছিল এই খাত। প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অচলাবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্প। মানুষের আয় কমে যাওয়া, প্রণোদনা নিয়ে জটিলতাসহ নানা কারণে এই খাতের পুনর্জাগরণ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন উদ্যোক্তারা। তবে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিল পর্যটন খাত।
বছরের শেষে পর্যটন মৌসুম শুরু হতেই নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে কখনো কখনো বেধে যাচ্ছে সংঘর্ষ-সহিংসতা। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো দফায় দফায় অবরোধ এবং হরতাল দিচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দৈনন্দিন জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়ছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য হলো পর্যটন খাত। বছরের এ সময় পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে পর্যটক কমেছে। দফায় দফায় অবরোধ দেওয়ার ফলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে পর্যটন মৌসুম শীতের শুরুতে লাভের বদলে লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা।
বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন যাচ্ছে, তা বুঝতে যে বিষয়গুলো সাহায্য করে তার মধ্যে অন্যতম হলো পর্যটন খাত। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের এক হিসেবে দেখা যায়, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কমে যায় শতকরা ৭২ শতাংশ। মহামারির প্রভাব এতটাই ভয়াবহ যে, ২০২২ সালের শেষদিকে এসেও পর্যটন শিল্প আগের অবস্থার কেবল শতকরা ৬৫ শতাংশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প তেমন শক্তিশালীভাবে এখনো গড়ে উঠতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, কোভিড-১৯-পূর্ববর্তী বছরগুলোতে, যেমন ২০১৮ সালে ২ লাখ ৬৭ হাজার এবং ২০১৯ সালে ৩ লাখ ২৩ হাজার বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই দুই বছরে বাংলাদেশের আয় ছিল যথাক্রমে ৩৫৭ ও ৩৯১ মিলিয়ন ডলার। করোনাকালে সারা বিশ্বেই পর্যটকের সংখ্যা স্বাভাবিক কারণেই কমে যায়। তাই ২০২০ সালে প্রায় এক লাখ ৮২ হাজার এবং ২০২১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসেন এবং আয় হয় যথাক্রমে ২১৭ ও ২৭৩ মিলিয়ন ডলার।
এ বছর শীত মৌসুমকে সামনে রেখে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সবার মধ্যে একটা হতাশা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অনেকে পর্যটন ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটন এলাকার কর্মচঞ্চল হোটেল-মোটেল জোনে এখন পর্যটক নেই বললে চলে। শুধু তা-ই নয়, গত দুই সপ্তাহে পর্যটন এলাকার হোটেল-মোটেলগুলোর হাজার হাজার কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, লোকসানে পড়েছেন শত শত হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘ হলে আর্থিকভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটন খাত। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে- তারা যেন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে। এতে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে পর্যটনশিল্প।
"