জিহাদ হোসেন রাহাত
মুক্তমত
সাইবার নিরাপত্তায় চাই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড
ইন্টারনেটনির্ভর জীবনের মূল চাবিকাঠি ধরা হয় নিরাপদ এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাকে। বর্তমানে পত্রপত্রিকা, পাঠ্যবই, সাইবার নিরাপত্তাভিত্তিক ম্যাগাজিন- যেখানেই নিরাপদ পাসওয়ার্ড নিয়ে আলোচনা করা হোক না কেন- সেখানেই শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের আগে তালা চিহ্নের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাস্তবিক জীবনে তালা বলতে আমরা মূলত দুষ্কর্মকারীদের তথা চোর-ডাকাতের হাত থেকে নিজের সম্পদ রক্ষার বিষয়টি বুঝি। অর্থাৎ এক কথায় তালা হলো নিরাপত্তার প্রতীক। বাস্তব জীবনে আমরা চোর-ডাকাতের জন্য তালা ব্যবহার করলেও সাইবার জীবনে সেটি একটু ভিন্ন। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- সেটি আবার কেমন ভিন্নতা? আসলে ইন্টারনেটনির্ভর সাইবার জগতে তালা ব্যবহার করা হয় সভ্য, ভদ্র ও কোট-টাই পরা লোকদের জন্য। এমনটির কারণ অবশ্য স্পষ্ট। একাধিক গবেষণা বলছে, প্রোগ্রামিং-বিষয়ক কাজে কোট-টাই পরা অভিজ্ঞ ও ভদ্র মানুষরাই ঘরে বসে সাইবার জগতের তালা ভেঙে অনায়াসেই লুট করে নিচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কোটি মানুষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
বিবিসির একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালে সারা পৃথিবীতে অন্তত প্রায় ৫৩ কোটিরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনার পর ২০২০ সালের এপ্রিলে একটি হ্যাকিং ওয়েবসাইট ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা অনলাইনে প্রকাশ করে। এখন প্রশ্ন হলো- কেন ঘটছে এসব হ্যাকিংয়ের ঘটনা? এগুলোর একটি বড় কারণ হচ্ছে চাঁদাবাজি বা ব্ল্যাকমেইল করা। শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এই ব্ল্যাকমেইলিং চক্র। সাইবার দুনিয়ায় নিরাপত্তা জোরালো করতে আমাদের উচিত নিরাপদ ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। মূলত এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে- যেগুলো অনেকটা ইউনিক। তা ছাড়া এ ধরনের পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সেটি যেন দুর্বল না হয়। কারণ দুর্বল পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের জন্য সোনায় সোহাগা। সোশ্যাল মিডিয়ায় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত প্রাথমিক ধারণা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই পেতে শুরু করি। অষ্টম শ্রেণিতে সে ধারণা রূপ নেয় একপ্রকার প্রাথমিক অভিজ্ঞতায়। সেসব ধারণার কয়েকটি উল্লেখ না করলেই নয়। যেমন- বর্ণ ও সংখ্যার মিশ্রণে পাসওয়ার্ড তৈরি করা, পাসওয়ার্ডে প্রতীকী কিছু চিহ্ন ব্যবহারের চেষ্টা করা (@$#*) অথবা ছোট বড় হাতের বর্ণের সংমিশ্রণ ফুটিয়ে তোলা যেমন ধরা যাক-
(rAhAtB#angladeSh)। পাশাপাশি অভিধানে পাওয়া যায় না এমন তথ্য ব্যবহার করা। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, পাসওয়ার্ড যেন আট সংখ্যার কম না হয় এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা মনে রাখার মতো ডিজিটে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তা ছাড়া সাইবার জগতে নিরাপদ থাকতে নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তনে অভ্যেস গড়ে তোলা জরুরি। এমনকি কোথাও নিজের মেইল, ফেসবুক কিংবা অন্য কোনো যোগাযোগ সাইট ব্যবহারের পর লগআউট করার ব্যাপারেও খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজন বিশেষে কোনো শব্দকে উল্টো করে লেখা যেতে পারে। তবে সেটি যেন ইউনিক হয়। সাইবার জগতে নিরাপদ ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির লক্ষ্যে আমাদের কতগুলো বিষয় থেকে দূরে থাকা উচিত। যেমন- কমন শব্দযুক্ত পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা। এমনকি একই পাসওয়ার্ড অনেক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার না করা। ব্যক্তিগত তথ্য (জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি) ব্যবহার থেকে দূরে থাকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেসেজ তথা বার্তা আদান-প্রদানের সময় নিজ পাসওয়ার্ড শেয়ার না করা। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য সেটিকে স্কিনসট অথবা ফাইল আকারে ড্রাইভে রাখি- এমনটি থেকে বিরত থাকতে হবে। আবার আমরা অনেকই জিমেইল ব্যবহারের পরিবর্তে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খুলে থাকি, এতে করে হ্যাকাররা সহজেই সেটি হ্যাক করতে সক্ষম হয়। পরে অবস্থা দাঁড়ায় এমন- আপন অস্ত্রে বাদশাহ ঘায়েল। নিজের খাটেই যমের বাড়ি যাওয়া বন্ধে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। তা ছাড়া একবার ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড পুনরায় ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে আমাদের।
অষ্টম ও দশম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বইয়ে সাধারণত বোঝানো হয়, নিজের দেওয়া সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড কোথাও লিখে রাখা যাবে না। ফলে দেখা যায় আমরা সহজেই পাসওয়ার্ড ভুলে যাই। সে ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড সহজে মনে রাখার জন্য আমাদের উচিত হবে- প্রিয় কবিতার লাইন, গানের কোনো শব্দ বা লাইন ব্যবহার করা। অর্থাৎ অন্যের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে, ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইই) একটি তথ্য বলছে, একজন হ্যাকার আট ডিজিটের বেশি WPA-2 PSK( Pre Shared Key) যুক্ত একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ভাঙতে চাইলে তার কম করে হলেও ৬৫ হাজার বছরের বেশি সময় লাগবে। অতএব বলা যায়, সাইবার জগতের ভদ্র দুষ্কর্মকারীদের হাত থেকে নিজ তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে নিরাপদ ও শক্তিশালী ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিকল্প নেই।
লেখক : স্নাতক শিক্ষার্থী, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ
"