পরীক্ষাকালে রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল ও নিষ্পত্তি হবে ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সাংবিধানিকভাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। এর আগে থেকেই রাজনৈতিক মাঠে বিরাজ করছে উত্তেজনা। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুই মেরুতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্থানে প্রতিনিয়ত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক হওয়ায় সহিংসতা আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে বাসচালকের সহকারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। এ ছাড়া গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষ ও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশের এক সদস্য। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১৬০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ঘটেছে ৮৬টি। দুই সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা অবরোধের মধ্যেই স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
নির্বাচন, রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা- সবই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সবকিছুই স্বাভাবিক গতিতে চলবে। বছরের শেষে সাধারণত বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তফসিল অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে নির্বাচন কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল মারমুখী হয়ে উঠেছে; হয়ে উঠেছে সহিংসও। এ দেশের রাজনীতিতে সংঘর্ষ বা সহিংসতার ঘটনা নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করবে, সভা-সমাবেশ-মিছিল করবে- সবই ঠিক আছে। তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথাও সবার ভাবা উচিত। এসব শিশু তো আমাদেরই সন্তান। বছরের শেষে তাদের পরীক্ষায় বসতে হয়। লাগাতার অবরোধের কারণে তাদের স্কুল-কলেজে যেতে সমস্যা হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বাসা থেকে বের হতে হয় ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে। কারণ অবরোধে প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় বাসে আগুন দেওয়া হয়। আবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের ঘরের বাইরে পাঠাতে সাহস করছেন না তারা।
স্কুলগুলোর প্রতি সরকারের নির্দেশনা রয়েছে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার। স্কুল কর্তৃপক্ষের সেই চেষ্টা হয়তো থাকবেও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার স্বার্থে ও তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে হলেও সব ধরনের কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে। সব মহল শিশুদের পরীক্ষা যাতে নির্বিঘ্নে শেষ হয় সে ব্যাপারে সহায়তা করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"