টিসিবির ট্রাকসেলে মানুষ যেন বঞ্চিত না হয়
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। এর প্রভাব পড়ছে খেত-খামার, কল-কারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের ওপর। দ্রব্যমূল্যের আওতার বাইরে চলে গেলে শুধু দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষজন নয়, এর প্রভাব পড়ে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণি পর্যন্ত। তাদের কথা বিবেচনা করে রাজধানীর ৩০টি স্থানে ট্রাকসেলে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এই ট্রাকসেলের মাধ্যমে লিটার ১০০ টাকা করে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬০, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ ও আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবি কার্ডের আওতাভুক্ত নয়, এমন স্বল্প-আয়ের মানুষের জন্য এবার ভর্তুকি মূল্যে এই বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে টিসিবি চত্বরে বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ঢাকায় অনেক মানুষ আছে, যাদের আমরা কার্ডের আওতায় আনতে পারিনি। অনেক ভাসমান মানুষ আছে, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। মূলত তাদের জন্যই এ কার্যক্রম। ঢাকার ৩০টি পয়েন্টে এ কার্যক্রম চলবে। প্রতিটি পয়েন্ট থেকে ৩০০ জন পণ্য কিনতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের দাম এখন বেশি। ডিসেম্বরে ফসল উঠবে, তখন সংকট কেটে যাবে। আবহমানকাল থেকে এ সময় একটু সংকট থাকে। তিনি জানান, আলু ও ডিম আমদানি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে অন্য পণ্যও আমদানি করা হবে। অন্যদিকে ট্রাকসেল কার্যক্রমে তেল, ডাল, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রির কথা থাকলেও অনেক স্পটে শুধু ডাল ও তেল বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এ বিষয়ে আরো জোরদার নজরদারি প্রয়োজন। কারণ যাদের উপকারার্থে সরকার এই শুভ উদ্যোগটি নিয়েছে তারাই যদি সুবিধাবঞ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে খুবই দুঃখজনক। বলাবাহল্য, এর আগে গত বছরের মাঝামাঝিতে এ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল সংস্থাটি। এরপর এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দিতে কার্ড ইস্যু করে টিসিবি। আপাতত ঢাকার মধ্যে এ কার্যক্রম চলবে। বেশি করে পণ্য আমদানি করা গেলে তখন ঢাকার বাইরে বিক্রির চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এবারের এই কার্যক্রম দুই মাসের মতো চলবে। সেই সঙ্গে টিসিবির কার্ডধারী এক কোটি মানুষ প্রতি মাসে একবার করে ভর্তুকি মূল্যে যেসব পণ্য পান, সেই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে টিসিবি। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীতে টিসিবির ট্রাকসেল আরো বহুগুণ বাড়ানো দরকার বলে আমরা মনে করি। তাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
বলা সংগত, কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার উদ্যোগ নিয়ে টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে ভোগ্যপণ্যগুলো বিতরণ করে আসছে। এ ছাড়া বর্তমানে আলু ও পেঁয়াজের উচ্চমূল্য বিবেচনায় টিসিবি কর্তৃক বিতরণ করা অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে আলু ও পেঁয়াজ ট্রাকসেলের মাধ্যমে ঢাকার ৩০টি পয়েন্টে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় শুরু হয়েছে। এই বিক্রয় কার্যক্রমে যাতে কোনো অনিয়ম না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"