reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ অক্টোবর, ২০২৩

নারীশ্রমিকদের স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত হোক

অর্থকরী ফসলের গুরুত্ব থেকে পাটকে যেমন বলা হয় সোনালি আঁশ, তেমনি চিংড়িকে বলা হয় সাদা সোনা (হোয়াইট গোল্ড)। দেশের অর্থনীতিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে এই চিংড়িশিল্প। প্রান্তিক চাষিদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সহায়তা করছে ‘সাদা সোনা’খ্যাত চিংড়ি। তবে কিছু দুষ্টচক্রের ‘কালো হাতের’ থাবায় এ শিল্পটি এখন হুমকির মুখে। অবৈধভাবে বেশি মুনাফা অর্জনের আশায় তারা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করছে। একের পর এক অভিযানে জেল-জরিমানা করে?ও কোনোভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চিংড়িশিল্প একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের স্থান প্রথম। এ খাতের মধ্যে চিংড়ির অবদান প্রায় ৮৬ শতাংশ। দেশে বর্তমানে প্রায় ১.৪০ লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এক বছরে চিংড়ি আহরণ প্রায় ৫ হাজার টন। এ অর্জনের পেছনে নারীশ্রমিকদের অবদান বেশি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নারীদের অবদান বেশি থাকলেও তারাই বেশি অবহেলিত। দীর্ঘদিন লবণপানিতে কাজ করার কারণে চিংড়িশিল্পে কর্মরত নারীশ্রমিকরা ৬ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েন। এসব রোগের মধ্যে ডায়রিয়া, আমাশয়, গা-হাত ও পা ফুলে যাওয়ার কারণে বড় ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়া, মাথা ঘোরা, অসময়ে গর্ভপাত এবং জরায়ু ক্যানসার অন্যতম। দেশের সব উপকূলীয় জেলায় নানামুখী সমস্যায় ভুক্তভোগী নারীশ্রমিকরা। দীর্ঘদিন লবণপানি ব্যবহারের ফলে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি, যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানি গ্রহণ ও ব্যবহারের ফলে জরায়ু-সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝুঁকিতে পড়ছেন নারীশ্রমিকরা। চিংড়িশিল্পে জড়িত নারীদের প্রধান সমস্যা কর্মক্ষেত্রে কর্মপরিবেশ না থাকা। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া শ্রমবৈষম্য তো রয়েছেই। দীর্ঘদিন কোনো নারী জরায়ু সমস্যায় ভুগলে তা থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে অনেকেই অল্প বয়সে বাধ্য হয়ে জরায়ু কেটে ফেলতে হয়। এ সুযোগে অনেক পরিবারে স্বামীরা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করছেন। একপর্যায়ে ভাঙছে প্রথম স্ত্রীর সংসার।

নারীশ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে রয়েছে চার ধরনের পরিবেশগত সমস্যা। এর মধ্যে বিশ্রাম নেওয়ার মতো কোনো ছাউনি নেই, রয়েছে শৌচাগারের অভাব, প্রখর রোদের মধ্যে নারীশ্রমিকদের জন্য খাবার পানির ব্যবস্থা থাকে অপ্রতুল এবং কিছু চিংড়ি খামারের পানি পচে দুর্গন্ধের কারণে দূষিত পরিবেশে নারীশ্রমিকদের কাজ করতে গিয়ে অনেকের বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। অভাবে কারণে ছোট ছোট রোগ শরীরে বাসা বাঁধলেও তা গোপন করে যান নারীশ্রমিকরা। যখন এসব রোগ বড় আকারের ধারণ করে, তখন সংসার পর্যন্ত ভেঙে যায় অনেক নারীর। পুরুষের সমানতালে নারীরা কাজ করলেও মজুরিবৈষম্যের বেড়াজাল থেকে শত চেষ্টার পরও বের হতে পারেন না। মজুরিবৈষম্যের জন্য একজন নারীশ্রমিক বছরে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা কম আয় করেন। ফলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যা নারীর ক্ষমতায়নের পথে একটি বড় অন্তরায়।

চিংড়িশিল্প শুধু অর্থকরী ফসল নয়, এখানে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মরত। চিংড়িকে ঘিরে উপকূলের অনেক এলাকার জনজীবন পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং এই শিল্পকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা করা দরকার। বিশেষ করে নারীশ্রমিকদের জন্য দ্রুতই স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে- এটাই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close