দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ০২ অক্টোবর, ২০২৩

মুক্তমত

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, যুদ্ধবন্ধ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক চালু, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সমস্যা, আঞ্চলিক সমস্যা এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তাসহ আইনি সুরক্ষা।

রাশিয়া-ইউক্রেন দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রতি বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে এক পরাশক্তি কর্তৃক অন্য পরাশক্তির ওপর নানা বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম। এর পাশাপাশি খাদ্যশস্যসহ নিত্যপণ্য পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও উচ্চমূল্য সবস্তরের মানুষকে ঠেলে দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে। অনেক দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। ফলে, মানুষ কষ্টে আছে। সেই প্রেক্ষাপট গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে অবিলস্বে এ যুদ্ধ বন্ধ করে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবেতর জীবনযাপনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ নিরাপত্তাসহ সামাজিক রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। এ পরিস্থিতি সন্ত্রাস ও মৌলবাদকে ইন্ধন জোগাতে পারে। ফলে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পড়তে পারে হুমকিতে। সে অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে অবিলম্বে সে দেশে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বোপরি, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার প্রতি বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে। তা না হলে পৃথিবী বিশেষ করে অনুন্নত ও সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো অচিরেই সমূহ ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। সে অবস্থা বিবেচনায় উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে অবিলম্বে। প্রধানমন্ত্রী হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে, বিশ্বকে ঝুঁকি ও বিপন্মুক্ত না রাখতে পারলে আমরা কেউই ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ নই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে বিশ্বকে যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার নীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। দৃঢ়ভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে। বাংলাদেশের সংবিধান সবার মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। বিগত কয়েক বছরের আন্তসংযুক্ত সংকটগুলোর কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আমদানি বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকার নিম্ন আয়ের ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনগণকে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতে এবং কোনো জমি অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

দেশের বিজ্ঞানীরা খরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতাসহ বিরূপ আবহাওয়া উপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে এ নিয়ে ১৭ বছর বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন। বিশ্বসমাজের সামনে তার বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। বিশ্ব আজ যে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করছে তার পেছনে শক্তিধর দেশগুলোর যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার অপখেলা প্রধানত দায়ী। এ অপখেলা বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০০ কোটির জীবনে বিড়ম্বনা ডেকে এনেছে। বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে কোভিড মহামারির মধ্যেও প্রবৃদ্ধির সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনে রুশ হামলা এবং পাল্টাব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক ধকল সৃষ্টি করেছে তাতে ওই সংকটের কোনো পক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। গরিব দেশগুলোয় নেমে এসেছে ক্ষুধা ও বেকারত্বের অভিশাপ। মানবতার স্বার্থেই যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার অপখেলা বন্ধ হওয়া উচিত এখনই।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close