reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ অক্টোবর, ২০২৩

কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই হলো ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু। আর এর ৪৮ শতাংশই হলো কন্যাশিশু। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এর অধিকাংশই জন্ম থেকে নানা বঞ্চনা ও বৈষম্য সঙ্গী করেই বেড়ে উঠছে। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যেমন রূদ্ধ হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতায় তারা পিছিয়ে পড়ছে সমবয়সি ছেলেদের তুলনায়। এ ছাড়া কন্যাশিশুরা ব্যাপকভাবে যৌন সহিংসতার শিকার। এই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য প্রয়োজন কন্যাশিশুর প্রতি প্রচলিত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো। উপলব্ধিতে আনা যে, কন্যাশিশুরা শুধু ভবিষ্যৎ মা-ই নয়, তারা জাতির সম্পদ। তাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা, তাদের বিকাশ ও সুরক্ষা এবং তাদের সমণ্ডঅংশগ্রহণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপরই বহুলাংশে নির্ভর করছে আমাদের জাতীয় অগ্রগতি। তাই তাদের প্রতি বিনিয়োগই অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।

নারী ও কন্যাশিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বাংলাদেশ এখন জেন্ডার সমতায় সারা বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি নারী ও কন্যাশিশুদের উন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কন্যাশিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকার লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বের সুদক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। ২০০৩ সালে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৩০ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। এবারও দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিনিয়োগে অগ্রাধিকার, কন্যাশিশুর অধিকার’। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরের ১১ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। এদিকে প্রতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। এই শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস হিসেবে।

বাল্যবিয়ের হার কিছুটা কমেছে- এটা যেমন ইতিবাচক খবর, তেমনি তার বিপরীতে হতাশাজনক খবরও আছে- কন্যাশিশু নির্যাতন ও নিপীড়ন আগের থেকে বেড়ে গেছে। গতকাল শনিবার প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯৩ কন্যাশিশু, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩২৯ জন। ১৩৬ কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পাচার করা হয়েছে ১০৪ কন্যাশিশুকে। তবে এ সময় বাল্যবিয়ের হার গত বছরের থেকে কমেছে ২৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারী সহিংসতার মামলাগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই। মামলা করেও মিলছে না ইতিবাচক ফল। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সমন্বিত আইন প্রয়োজন। পর্যবেক্ষণ বলছে, বয়ঃসন্ধিকালে অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন হয়রানির ঘটনা ঠেকাতে না পারার কারণে বাল্যবিয়ে কমানো যাচ্ছে না। একটা মেয়েশিশু সমাজে বড় হয়ে ওঠার পথে চারপাশে তার অগ্রজ নারীদের যেভাবে দেখেছে, সেটাকেই সে স্বাভাবিক হিসেবেই ভেবে নেয়। তাকে ছোটবেলা থেকে শেখানো প্রয়োজন, কোন আচরণগুলো নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে এবং ওই নির্যাতন প্রতিরোধে তার কী করা উচিত। তবেই হ্রাস পাবে নারী তথা কন্যাশিশু নির্যাতন-নিপীড়ন।

আমরা মনে করি, শিশু ও নারীদের সুরক্ষায় নিজ পরিবার থেকেই সচেতন হতে হবে। আর এ বিষয়ে সরকারের যথাযথ দৃষ্টি দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে নারীদের প্রতি যেন কোনো সহিংসতা না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close