শিক্ষার্থীদের গাইড বই নির্ভরতা কমাতে হবে
নিঃসন্দেহে বলা যায় বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার নানা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ। যে বইগুলো আমাদের কাছে বোর্ড বই নামে পরিচিত। এর বাইরে আছে গাইড বা সহায়ক বই। বোর্ড বইয়ের বাইরে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইকে ‘সহায়ক’ বলা হলেও কার্যত তা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর।
দিনে দিনে গাইড বা সহায়ক বইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের নির্ভরতা বাড়ছে। তারা শর্টকার্টে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে হাতে তুলে নিচ্ছে সহায়ক বই, যা সৃজনশীলতা বিকাশ ব্যহত করছে। মুখস্থবিদ্যা ও গাইড বইনির্ভরতার বদলে চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটানোই ছিল সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর পেছনের কথা। কিন্তু বাজার যেখানে সৃজনশীল গাইড বইয়ের দখলে, সৃজনশীল পদ্ধতিই হুমকির মুখে পড়াটা স্বাভাবিক! সব শ্রেণির, সব বিষয়ের সৃজনশীল বিষয়ের গাইড বই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। অভিভাবকরা বুঝে কিংবা না বুঝেই এসব বই তুলে দিচ্ছেন তাদের ছেলেমেয়েদের হাতে। ছাত্রছাত্রীরাও ভাবনাচিন্তা ধারালো করার চেয়ে গাইড বইয়ের প্রতি বেশি মনোযোগী। অথচ সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের একমাত্র সহায়ক হওয়ার কথা পাঠ্যবই অর্থাৎ বোর্ড বই।
প্রতিদিনের সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, চাঁদপুরে প্রাথমিকের তৃতীয় থেকে পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থী সহায়ক বইয়ের ওপর নির্ভরশীল। খুবই কমসংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা চলতি শিক্ষাবর্ষের ৯ মাসের মধ্যে সহায়ক বই পড়েনি। তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে সহায়ক বই পড়ার হার কিছুটা কম। জেলা সদরের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক এবং অভিভাবকদের ভাষ্য থেকেই এসব তথ্য জানা গেছে। ওই এলাকার কোনো শিক্ষার্থী বলছে, স্কুলের শিক্ষকই তাকে গাইড ববই পড়তে বলেছেন। কোনো শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ইংরেজি গ্রামার ও বাংলা ব্যাকরণ বোঝার জন্য গাইড বই পড়তে হয়। অবশ্য শিক্ষকরা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পড়ে। কিন্তু অতিরিক্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীরাই সহায়ক বই পড়ে। আমাদের পক্ষ থেকে পড়ার জন্য বলা হয় না। আবার কোনো শিক্ষক এও বলেছেন যে, শ্রেণিকক্ষে বেশি শিক্ষার্থী হলে দলগত পড়ার জন্য সমস্যা হয়। অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে বিস্তারিত পড়ার জন্য সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন হতে পারে। শিক্ষার্থীরা নিজের ইচ্ছায় হোক বা শিক্ষকরা পড়তে বলেন অথবা যদি অভিভাবকরাও তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে গাইড তুলে দেন সেটা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ এই বই থেকে শর্টকার্টে হয়তো পরীক্ষায় পাসের একটা নির্দেশনা পায় তবে এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হয় না। সেজন্য পাঠ্যবই পড়তে হবে। এর কোনো বিকল্পও হতে পারে না।
পাঠ্যবই এড়িয়ে এই যে গাইড বইয়ের প্রতি নির্ভরশীলতা- এটা চাঁদপুরে নয়, একই চিত্র দেখা যাবে সারা দেশে। গাইড বই শিক্ষার্থীদের মেধাশূন্য হিসেবে গড়ে তুলছে। কারণ তাদের মেধার সৃজনশীল বিকাশ হচ্ছে না। তারা কোনো বইয়ের সহায়তা নিয়ে পরীক্ষায় সহজে পাস করার একটা পথ খুঁজে নিচ্ছে। এই প্রবণতা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে আনা উচিত। সেজন্য শিক্ষক-অভিভাবক সবাইকে সচেতন হবে।
"