সাকিবুল হাছান
মুক্তমত
দক্ষ জনশক্তির অভাব ও বেকারত্ব
বর্তমানে আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে চাকরির বাজারে যাচ্ছে কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মিলছে না জব অথচ তারা উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু কেন উচ্চশিক্ষিত হয়েও বেকার থাকতে হয় তা প্রশ্ন থকেই যায়!
আমাদের দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। সে তুলনায় কি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে? আয়তনের দিক দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ। অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যা রাশিয়ার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেই সঙ্গে বেকারত্বের হারও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার কারণ এখন সবাই সাধারণ শিক্ষামুখী। দেশে পর্যাপ্ত কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা নেই। নেই কোনো উৎপাদনশীল শিল্পপ্রতিষ্ঠানও।
গত নভেম্বর মাসে দেশের বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে পৌঁছায়। অর্থাৎ, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উচ্চহলেও- তা তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরি তৈরি করার মতো যথেষ্ট হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুলাইয়ে দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে বেকার পুরুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯০ হাজার, আর বেকার নারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪০ হাজার।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রতিটি শিশু ৬০ হাজার টাকা বাজেট ঘাটতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। বছর শেষে প্রতিটি নবজাতকের মাথার ওপর ঋণের বোঝা চাপছে এক লাখ টাকা। তার মানে হলো, প্রতিদিন ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ৩৬ কোটি টাকা। শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ লাভ করা শিশুর মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মূল টার্গেট অ্যাকাডেমিক সনদ পাওয়া কিংবা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা। কিন্তু বাস্তবমুখী পড়াশোনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। ফলে উচ্চশিক্ষিত হয়েও থাকতে হচ্ছে বেকার, মিলছে না চাকরি। এ সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের বাস্তবমুখী শিক্ষা দরকার। আমাদের নিজেদের দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। চাকরি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমরা এখনো পুরোনো পদ্ধতিকে আঁকড়ে ধরে পড়ে আছি। যে যত বেশি মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শী হতো, সে ভালো চাকরি পাবে, যা নিতান্তই হাস্যকর পদ্ধতি। একমাত্র বেকাররা-ই জানে তাদের সংগ্রামের ইতিহাস।
একসময় একটা কাজ করার জন্য অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হতো কিন্তু বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। যেকোনো কাজ কম লোকসংখ্যা এবং স্বল্প সময়ে করা যাচ্ছে ফলে অনেক মানুষ কর্মহীন থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক, অর্থনীতিবিদ জায়েদ মনে করেন, প্রতি বছরই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিক্ষারভিত্তিতে অর্থনৈতিক নীতি এবং অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় না করলে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। শিক্ষাকে যদি কর্মমুখী করে তোলা যায়, তবে শিক্ষিতদের চাকরি পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না।
লেখাপড়া করছি মানেই যে সরকারি বড় বড় চাকরি করব তা ভেবে বসে থাকলে হবে না। নিজেকে বিভিন্নভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্রবণতা থাকে সেটা হলো চাকরি। আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। যারা জব করে তাদের একভাবে দেখে আবার যারা জব করে না তাদের অন্যভাবে দেখে, যা শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বেকারত্ব সমস্যাটা আমাদের কারো না। বেকারত্ব সমস্যা নিরসনে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
একজন শিক্ষার্থী যখন কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হবে তখন সে স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল হবে ফলে সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান করে নিতে পারবে। দক্ষ মানুষই পারে একটি দেশকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু দক্ষতা না থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ অদক্ষরা সমস্যার সমাধান করতে পারে না বরং সমস্যা বাড়ায়। তাই দক্ষ মানুষ তৈরিতে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দরকার।
বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি যদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমে আসবে। বর্তমানে যারা বেকার আছে তারা যদি কর্মমুখী
শিক্ষা অর্জন করতে পারে, তাহলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারবে। তাই সরকারের উচিত কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বারোপ করা। যে ধরনের শিক্ষা যুগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে, সে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হোক। দক্ষ মানুষ তৈরি করাই হোক আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান লক্ষ্য।
লেখক : শিক্ষার্থী
ঢাকা কলেজ, ঢাকা
"