জাহিদুল হাসান
মুক্তমত
আত্মহত্যা মানেই কি সবকিছু থেকে মুক্তি

মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নানা কারণেই আক্রান্ত হয়। যেমন হতাশা ও দুশ্চিন্তায়। যখন এর উপায় খুঁজতে গিয়ে মিলেনা কোনো মুক্তির পথ, তখন মানুষ হয়ে উঠে জীবনবিমুখ, আর তখনই কেউ কেউ বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো পথ। প্রায় সব মানুষের মধ্যেই দুঃখ, কষ্ট, হতাশা থাকে। অনেক মানুষই এই দুঃখ-কষ্ট, হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারে। তবে কিছু কিছু মানুষ তা কাটিয়ে উঠতে পারে না, আর যারা তা কাটিয়ে উঠতে পারে না তাদের বেশির ভাগ অংশই চিন্তা করে জীবনকে নিজ হাতে শেষ করে দেওয়ার।
দেশে প্রতি বছর আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা। ২০২২ সালে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে গবেষণা সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা গেছে অনেক, এই এখন প্রশ্ন হলো এর সমাধান কোন পথে? শীর্ষক সমীক্ষায় দেখা যায়, আত্মহত্যা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০১ জন।
দেশের ১০৫টি জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। তারা তাদের গবেষণায় বলছে, অভিমানে আত্মহত্যা করেছে ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রেমঘটিত কারণ, পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ, যৌন হয়রানি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন। তাদের মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী শিক্ষার্থী।
২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৯ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তা ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
বর্তমান প্রক্ষাপটে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমাদের শিক্ষকদের বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হয় না। বিশ্বের অনেক দেশে ছাত্রাবস্থায় একটা আয়ের সুযোগ থাকলেও আমাদের দেশে এখনো সেই উৎস তৈরি করতে পারেনি। ফলে এখন শিক্ষার্থীদের একমাত্র হাতিয়ার টিউশন অথবা খণ্ডকালীন চাকরি। তা ছাড়া বর্তমানে আত্মহত্যার একটা বড় কারণ করোনাকালীন ধাক্কা। ওই সময়ের পর অনেকের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, বাধ্য হয়ে অনেককে দীর্ঘ সময় বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। তাদের ওপর পরিবারের যেই এক ধরনের প্রত্যাশা ছিল। বাড়িতে থাকার কারণে হয়তো তারা সেটি পূরণ করতে পারেনি। তা ছাড়া সামাজিক জীবন বিঘ্নিত হয়েছে, অনেকের সম্পর্ক ভেঙে গেছে। চাকরির পরীক্ষা তেমনভাবে হচ্ছে না। বেকারত্ব বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাদের মধ্যে হতাশার সঞ্চার হয়েছে, অস্থিরতা বেড়েছে। এ কারণে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।
এখন কথা হলো কীভাবে এই আত্মহত্যা নির্মূল করা যায় বা কমিয়ে আনা যায়, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে ভূমিকা সেটা হলো আমাদের পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে, মানসিক দিক দিয়ে সাপোর্ট করতে হবে, এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভাগে এবং আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক অনীহা আছে। যদি এই জায়গাগুলোতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যায় তাহলে বলা চলে আত্মহত্যার প্রবণতা একেবারে শূন্যে না নামলেও অনেকাংশেই কমে আসবে।
লেখক : শিক্ষার্থী ও জবি প্রতিনিধি
প্রতিদিনের সংবাদ
"