
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা

বিশ্বে মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। তবে সেই আলোচনার রেশ এখনো চলছে। বিশেষ করে করোনা মহামারি এবং পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো ধুঁকছে মূল্যস্ফীতির তীব্র আঘাতে। পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যের কারণে দেশে দেশে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরার জন্য দফায় দফায় সুদের হার বাড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। ডলারের বিপরীতে গ্রেট ব্রিটেনে পাউন্ডের অবমূল্যায়ন হয়েছে ১২ শতাংশের বেশি, ইউরোর দর পড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশেও আছড়ে পড়েছে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির এই ঢেউ। তবে সাময়িকভাবে সরকারকে তা সামাল দিতে বেগ পেতে হলেও বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
বলা সংগত, বাংলাদেশ এরই মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত আছে। কোভিড অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ সব ক্ষেত্রে জোগান ব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এ ছাড়া কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপকরণ ও নীতি সহায়তার ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প থেকে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি রয়েছে। এই শিল্পগুলোর প্রায় ৫০ হাজার জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দেশে মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ও কষ্টের সম্মুখীন হয় স্বল্প আয়ের মানুষরা। সুতরাং এদের সুরক্ষায় নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ী যাতে তার ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য দেশের জনগণকেও সচেষ্ট থাকতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সব সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার ও নিরাপত্তা। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"