অসহনীয় তাপমাত্রা
বিপর্যয় থেকে রক্ষার উপায় খুঁজতে হবে
ভয়াবহ তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। কয়েক দিন ধরে দেশের প্রায় সবখানেই প্রচণ্ড গরম চলছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে তীব্রমাত্রার গরম পড়বে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আজকাল যে গরম পড়ছে তা জ্যৈষ্ঠের স্বাভাবিক রূপের চেয়েও বেশি। এই দাবদাহে শুধু মানুষ নয়, পশুপাখি-গাছপালা সবই খরতাপে কাতর; মাঠঘাট শুকিয়ে চৌচির। গ্রীষ্মকালে গরমের স্বাভাবিক রূপ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ক্রমান্বয়ে তা বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা বাড়াচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা অর্থাৎ পৃথিবী জুড়ে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে আর্দ্রতা বাড়া।
চলমান তাপপ্রবাহের তিনটি কারণের কথা বলছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। যার একটি ঘূর্ণিঝড় মোখা। সাইক্লোন মোখার কারণে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছিল। ফলে বাংলাদেশ-ভারতের তাপমাত্রা বেশি। মোখার সময় এই পুরো বেল্ট ওভারহিটেড হয়ে যায়। এটা একটা কারণ। মোখার প্রভাবে এখনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহারে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তখন থেকেই লু হাওয়া বইছে বাংলাদেশের দিকে। বজ্রঝড় কমে যাওয়াও তাপপ্রবাহের আরেকটা কারণ। প্রত্যেকবার মে মাসে ১৮ থেকে ২৪ দিন বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর আনাগোনা থাকে। ফলে হিমালয় থেকে সেভেন সিস্টার্স পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে বজ্রঝড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টিও কম হচ্ছে, মাটি উত্তপ্ত থাকছে। তাপপ্রবাহের আরেকটা কারণ হলো বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য, যা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বাতাসের গতিবেগও এখন অনেক কম বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। ফলে মানুষের কষ্ট আরো বাড়ছে।
বাইরে কাঠফাটা রোদ আর ঘরে লোডশেডিং মানুষের জীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। এতে তৈরি হচ্ছে নানান স্বাস্থ্যঝুঁকি। কিন্তু তার পরও ঝড়, বন্যার মতো দাবদাহকে সেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা হয় না। তাপপ্রবাহকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আওতায় আনলে ঝুঁকি কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তাপপ্রবাহ অবশ্যই বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কারণ এখানে জীবনের ঝুঁকি আছে। আর সরকারও এ ব্যাপারে চিন্তা করছে বলে আমরা জানতে পারি। দেশে শৈত্যপ্রবাহ ঘিরে নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। কিন্তু তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভের ক্ষেত্রে সেভাবে কোনো প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। তাই যদি এটি দুর্যোগের আওতায় আসে, তাহলে এর ঝুঁকি কমিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ‘যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে সেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। আর এ থেকে সহসা পরিত্রাণ নেই। সুতরাং যদি এটাকে দুর্যোগ হিসেবে দেখা হয় তাহলে কিছু করার সুযোগ থাকে।’
তাপপ্রবাহে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৃদ্ধ, শিশু এবং যারা বাইরে কাজ করেন। তাপপ্রবাহকে এখন নীরব ঘাতক বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকতে করণীয় বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে কাজের সময়ঘণ্টার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ আমরা চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন করে ফেলত পারব না। তবে কিছুটা নিরাপদ থাকার পথ খুঁজে বের করতে পারি মাত্র। তাপমাত্রা বাড়া বা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা তৈরির পেছনে দায়ী মূলত মানুষই। এখন শুধু এটুকু বলা যায়, আমরা আমাদের কর্মফল ভোগ করছি।
"