শামীম মাহমুদ

  ০৩ জুন, ২০২৩

মুক্তমত

পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খানের পূর্ব পাকিস্তান প্রসঙ্গ

পাকিস্তানের রাজনীতিতে এ মুহূর্তে সব থেকে আলোচিত ব্যক্তি হচ্ছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমেই তার একটি বক্তব্য খুব গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে। বক্তব্যটি ছিল এ রকম যে, ‘নির্যাতন করে বাংলাদেশের জন্ম ঠেকানো যায়নি।’ শুধু এখনই নয়, ক্ষমতা হারানোর পর বিভিন্ন সময়ই তিনি পূর্ব পাকিস্তান বিষয়ে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন। ক্ষমতা হারানোর পর নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবের সঙ্গে যা করা হয়েছিল, তার সঙ্গেও তা করা হচ্ছে।’

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতা হারানোর পর কেন ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইতিহাসের এমন একটি প্রসঙ্গকে বারবার তুলে আনছেন, যেটি নিয়ে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতাই এর আগে কখনো মুখ খুলেননি।

আমরা জানি, পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটি অর্ধেকেরও বেশি সময় সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। এমনকি এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচিত সরকারও পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।

বলা হয়ে থাকে, ২০১৮ সালে ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পেছনেও ছিল সেনাবাহিনীর বড় ধরনের ভূমিকা। আবার ইমরান খান নিজেই বলেন, সেনাবাহিনীর বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই তাকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছে! তবে ক্ষমতা হারানোর পর পুরো পাকিস্তানে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকহারে। এর বড় একটি অংশই হচ্ছে তরুণ। হয়তো ইমরান খান এখন ভাবছেন, এটিই সব থেকে ভালো সময় পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীর প্রভাবমুক্ত করার! আর এজন্য তিনি তার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সেনাবাহিনীকে উপস্থাপন করছেন! আর সেনাবাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে তরুণদের বিরূপ মনোভাব তৈরি করতে, তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে বারবারই সামনে আনছেন। তিনি পাকিস্তানের জনগণকে বোঝাতে চাচ্ছেন, পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পেছনে সেনাবাহিনীই দায়ী। তিনি এই বার্তাটিও সুস্পষ্টভাবে দিচ্ছেন যে, দেশের রাজনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে সরাতে হবে! এজন্যই তিনি জামিন পাওয়ার পর বর্তমান সরকারের থেকে বেশি সমালোচনা করেছেন সেনাবাহিনীকে। কেননা তিনি জানেন, তার জনপ্রিয়তা দিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খুব সহজে পরাজিত করতে পারলেও, তার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সব থেকে বড় বাধা হতে পারে সেনাবাহিনী। তাই তিনি বারবার পূর্ব পাকিস্তান প্রসঙ্গটি তুলে সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানের রাজনীতির ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তিনি পাকিস্তানের জনগণকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন যে, এখন পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে সরানো না গেলে সামনে পাকিস্তানেও তারা ১৯৭১ সালের মতো বর্বরতা চালাবে।

এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিও একটি বড় কারণ হতে পারে। ইমরান খান যখন সরকারে ছিলেন, তখন আমরা দেখেছি, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যখন ইমরান খান পূর্ব পাকিস্তানের প্রসঙ্গটি নতুন করে সামনে আনছেন, তখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যেমন তার লাভ হচ্ছে, তেমনি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির পথও তার জন্য মসৃণ হবে। কেননা এতে করে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে তার একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে, বাংলাদেশও চাইবে দক্ষিণ এশিয়ায় একমুখী কূটনীতি থেকে বের হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির দিকে এগোতে!

তবে যদি ইমরান খান নিজের অনুশোচনা থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রসঙ্গটি তুলে থাকেন। তবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভবিষ্যতে তিনি ক্ষমতায় এলে যেন পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close