reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ মে, ২০২৩

হালদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামে পরিচিত হালদা নদী বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ বাস্তুতন্ত্র। এ বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে ছোট-বড় ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি ও গাঙের ডলফিন। হালদা নদী কার্পজাতীয় মাছ- রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে বর্তমানে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার ভরা প্রজনন মৌসুম চলছে। কিন্তু প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলেও নদীতে ঢলের প্রকোপ না থাকায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ। তবে মা মাছ ডিমের আলামত হিসেবে আংশিক নমুনা ছেড়েছে।

মাছের প্রাকৃতিক এ প্রজনন ক্ষেত্রে যে পরিমাণ ডিম পাওয়া যায় তা অনেকাংশে বিরল। প্রতি বছর জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে এই হালদা। সাধারণত চৈত্র মাসের অমাবস্যা অষ্টমী কিংবা পূর্ণিমা তিথিতে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। কিন্তু এ বছর চৈত্র মাসে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। বাংলা বছরের শেষ মাসে নদীতে ডিম না ছাড়লেও বৈশাখ মাসের কোনো তিথিতে হয়তো ডিম ছাড়বে বলে ধারণা ছিল আহরণকারীদের। এ মাসেও চারটি তিথি চলে গেলেও মা মাছের ডিম ছাড়ার কোনো আলামত দেখা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং ঘূর্ণিঝড় মোখার আগ থেকে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে বৈশাখ মাসেও ডিম ছাড়েনি। চৈত্র ও বৈশাখ মাসের তিথি চলে গেলে ডিম আহরণকারীরা মনে করেছিলেন জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমে অমাবস্যা তিথিতে মাছ ডিম ছাড়বে। ঘূর্ণিঝড় মোখার রেশ না কাটতেই বজ্রসহ বৃষ্টিপাত দেখে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া, পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ না থাকায় ডিম ছাড়েনি মাছ।

প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডেও হুমকির মুখে পড়েছে হালদা। দূষণ, জাল, বড়শি ও বিষ দিয়ে অবৈধ মৎস্য শিকার, অবৈধ বালু উত্তোলন, চরকাটা, হালদার উজানে ভুজপুর ও হারুয়ালছড়ি রাবার ড্যাম, ধুরুং খালের ওপর কংক্রিট ড্যাম, হালদা ও এর বিভিন্ন শাখা খালগুলোতে পলি জমে ভরাট ইত্যাদি কারণে হালদার স্বাস্থ্যব্যবস্থা তথা জলজ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অবৈধভাবে ব্যবহৃত জাল বা বড়শির মাধ্যমে মাছ মারা হচ্ছে। এভাবে একদিকে মাছের মৃত্যু, অন্যদিকে ডলফিনের মৃত্যু, উভয়ের মৃত্যর কারণে হালদা বাস্তুতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধের উপায় কী?

হালদার মাছের মরণ হলে দেশের অর্থনৈতিক ও মৎস্য খাতে মহাসংকট দেখা দিতে পারে বলে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও হালদার দিকে খুব একটা নজর দেওয়া হয়নি। নানা কারণে প্রাকৃতিক এই মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এখন ধ্বংসের পথে। সরকার এদিকে নজর না দিলে গুরুত্বপূর্ণ মাছের এ অভয়ারণ্যটি অচিরেই নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে। তাই আমরা আশা করব, সরকার হালদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close