reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ মে, ২০২৩

জাগ্রত হোক নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ

মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। সেটা তার বিবেকবোধ বা আচরণগত কারণের জন্যই। মানুষের থাকে মনুষ্যত্ব, আর সে জন্যই মানুষের কাছ থেকে সমাজ সব সময় মানবিক মূল্যবোধ প্রত্যাশা করে। প্রত্যেক সমাজে তার সদস্যদের আচরণ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি থাকে। নীতিহীন সমাজ হয় উচ্ছৃঙ্খল, বিভ্রান্তিকর ও অনিশ্চিত। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হলে সমাজে নেমে আসে অধঃপতন। তখন মানুষের ভেতর ভর করে পশুত্ব। চারপাশে ঘটে যাওয়া এমন সব ঘটনা আমাদের অবলোকন করতে হয় যে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে- মানুষের বিবেকবোধ কি বিলুপ্ত হয়ে গেল?

নীতিহীন সমাজ যে উচ্ছৃঙ্খল, বিভ্রান্তিকর, অনিশ্চিত ও অসহিষ্ণু হয়, তার ভুরিভুরি উদাহরণ আছে আমাদের চারপাশে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মধ্যে দেখা দেয় নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। সমাজ ও পরিবারে বেজে উঠছে ভাঙনের সুর। নষ্ট হচ্ছে পবিত্র সম্পর্কগুলো। চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান বেশি হয়ে যাওয়ার ফলে বাড়ছে আত্মহত্যাসহ নানা অপরাধপ্রবণতা। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবসহ সম্পর্কের এমন নির্ভেজাল জায়গাগুলোতে ফাটল ধরেছে। ঢুকে পড়েছে অবিশ্বাস। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কেও সৃষ্টি হচ্ছে আস্থার সংকট। সমাজে প্রায় প্রতিটি সম্পর্কই নড়বড়ে হয়ে গেছে। ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, শ্রদ্ধাবোধের বদলে সম্পর্কগুলোতে প্রাধান্য পাচ্ছে বৈষয়িক নানা বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ের শিশুহত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, সন্ত্রাস, নকলপ্রবণতা, খাদ্যে ভেজাল, নকল ওষুধ ইত্যাদি সমাজের করুণ রূপ। সমাজের মানুষ কেউ যেন কারো বন্ধু নয়। প্রত্যেকে পরোক্ষভাবে একে-অপরের ক্ষতিসাধনে মগ্ন।

সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে পাত্রী দেখতে গিয়ে খুন হন জমির হোসেন রুবেল নামে এক যুবক এবং তার দুই বন্ধু ইমরান ও ইউসুফ। পাত্রী দেখে ফেরার পথে অপহরণের শিকার হন তারা। মুক্তিপণের ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে গুলি করে হত্যা করে অপহরণকারীরা। ঘটনার মূলহোতা সোনালীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৫। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সোনালী জানিয়েছে, অপহৃতদের গুলি করে হত্যার পর পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে দেয় এবং মরদেহগুলো আগুনে পুড়িয়ে আলামত ধ্বংস করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণকারী চক্রের আস্তানার সন্ধান পায় এবং আস্তানার পাশে একটি স্থানে দুটি গলিত মরদেহ ও দূরবর্তী স্থানে আরেকজনের গলিত মরদেহ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় অপহৃতদের আস্তানায় নিয়ে এসে নির্যাতন করা হতো এবং পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা না পেলে হত্যা করে পাহাড়ি এলাকায় ফেলে দিত তারা। অপহরণের পর হত্যা আমাদের সমাজের নতুন ঘটনা নয়। এমন আরো অনেক অপরাধই সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এমন সব সংবাদ আমরা গণমাধ্যমে দেখি, তাতে আমাদের শিউরে উঠতে হয়। এসব ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, সমাজে ক্রমশ নীতি-নৈতিকতাহীন অমানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, আর আমরা হারিয়ে ফেলছি সামাজিক মূল্যবোধ।

সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়, মানুষের মধ্যে বেড়ে যায় নানা অপরাধপ্রবণতা। যা বর্তমান সমাজে প্রকট। সামাজিক নিরাপত্তা আজ ভূলুণ্ঠিত। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি এ থেকে মুক্তি পাব না? মানুষ কি মানুষের প্রতি সহনশীল হবে না? এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া কঠিন হলেও এর প্রতিকারের উপায় আমাদের বের করতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, মানুষের বিবেক জাগ্রত হবে। সমাজে ফিরে আসবে নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close