বিলাল হোসেন মাহিনী

  ২৬ মে, ২০২৩

ধর্মচিন্তা

আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর বয়ানে আল-কোরআন

মহাগ্রন্থ আল-কোরআন বিশ্ব মানবতার মুক্তির অমূল্য সনদ, যা সর্বকালে পৃথিবীর সব মানুষ ও জীবজগতের জন্য অফুরন্ত রহমত ও কল্যাণের একমাত্র আকর। দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও নাজাতের উসিলা আল-কোরআন। আসুন জেনে নিই, মহাগ্রন্থ কোরআন বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর বর্ণনা।

১. কোরআন আল্লাহর কালাম (বাণী) : পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় এ কোরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ (সুরা আশ শুয়ারা : ১৯২) ২. জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে অবতীর্ণ : পবিত্র কোরআন আল্লাহর ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে নাজিল হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরাইল) তা (কোরআন) নিয়ে (পৃথিবীতে) অবতরণ করেছে।’ (সুরা শুয়ারা-১৯৩) ৩. নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এ ওপর অবতীর্ণ : পবিত্র কোরআনের ছয় হাজার ২৩৬টি আয়াত আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দীর্ঘ ২৩ বছরে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ও প্রয়োজনে নাজিল হয়। আল্লাহতায়ালা নবী (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যা (কোরআন) তোমার অন্তরে (রয়েছে), যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সুরা শুয়ারা-১৯৪) ৪. কোরআনের ভাষা আরবি : সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় পবিত্র কোরআন নাজিল করেন আল্লাহতায়ালা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় (কোরআন নাজিল করা হয়েছে)’ (সুরা শুয়ারা-১৯৫) ৫. কোরআনে কোনো বাতিল বা ভ্রান্ত কিছু প্রবেশ করতে পারবে না : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মিথ্যা, বাতিল বা ভ্রান্ত কোনো কিছুর (কোরআন) কাছে, সামনে বা পেছন দিয়ে আসতে পারবে না।’ (সুরা হা-মিমণ্ডসিজদাহ-৪২) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘(কোরআন) সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, এতে রয়েছে মুত্তাকিদের জন্য পথের দিশা।’ (সুরা আল-বাকারা : ২) ৬. কোরআনের চ্যালেঞ্জে তথা সামনে অন্য কোনো মত, পথ, দর্শন বা প্রমাণ টিকবে না : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে নবী) তোমার কাছে তারা এমন কোনো সমস্যাই নিয়ে আসে না, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি।’ (সুরা ফুরকান-৩৩) ৭. অন্তরের রোগ নিরাময়ক : পবিত্র কোরআন সর্ব রোগের ওষুধ হিসেবে মানবজাতির জন্য নাজিল হয়েছে। বিশেষত, মানুষের অন্তর্জগতের শেফা (আরোগ্য) লাভ হয় কোরআনের মাধ্যমে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, (এই কোরআন) তোমদের অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর মুমিনের জন্য সঠিক পথের দিশা ও রহমত।’ (সুরা ইউনুস-৫৭) ৮. কোরআনের বিকল্প শুধু কোরআন : কোরআনের মতো একটা কিতাব এমনকি এর ছোট্ট একটা সুরার মতো একটা সুরা কস্মিনকালেও কেউ বানাতে পারবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বল, এ কোরআনের মতো একখানা কোরআন আনার জন্য যদি সমগ্র মানবজাতি আর জিন একত্র হয় তবু তারা তার মতো কিছুই আনতে পারবে না। যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করে।’ (সুরা বানী ইসরাইল-৮৮) ৯. কোরআন কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে : কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই পবিত্র কোরআন কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে শতসহস্র হাফেজে কোরআনের হৃদয়পটে। কেননা, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাহিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।’ (সুরা হিজর-৯)

আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘এ এক মহিমান্বিত কোরআন, যা লাওহে মাহফুজে-সুরক্ষিত ফলকে সংরক্ষিত। (সুরা বুরুজ, আয়াত ২১-২২) ১০. পূর্ণ প্রতিদান ও লোকসানবিহীন ব্যবসায় : কোরআনওয়ালারা (পাঠক ও শিক্ষক) কখনো লোকসানে পড়বে না এবং তারা সর্বদা পূর্ণমাত্রায় প্রতিদানপ্রাপ্ত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে... তারা এমন এক ব্যবসায়ের আশা করে যাতে কক্ষনো লোকসান হবে না।’ ‘কারণ তিনি তাদের প্রতিফল পূর্ণমাত্রায় দান করবেন...।’ (সুরা ফাতির-২৯-৩০) ১১. কোরআনওয়ালারা বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত হয় : হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত ওমর (রা.) মক্কার গভর্নর নাফে ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানতে চান, পাশের গ্রামে কাকে শাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? নাফে (রা.) জানান, ইবনে আফজা (রা.)-কে। যে কি না গোলাম ছিলেন। কিন্তু তাকে তিন বৈশিষ্ট্যের জন্য শাসক বানানো হয়েছে, এক. সে কোরআনে অভিজ্ঞ, দুই. সে ফারায়েজে অভিজ্ঞ, তিন. সে বিচারে পারদর্শী। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২১৮) ১২. দুনিয়ার সেরা মানুষগুলো কোরআনওয়ালা : নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে নিজে কোরআন শিখে ও অন্যকে শেখায়।’ (তিরমিজি-২৯০৯) ১৩. পড়লেই সওয়াব : এটা এমন একটা বিস্ময় কিতাব, যার একটি অক্ষর পড়লে ১০টি নেকি হাসিল হয়। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘কোরআনের এক অক্ষরে এক নেকি, আর উক্ত নেকিকে আল্লাহ দশ নেকিতে পরিণত করেন।’ (তিরমিজি-২৯১০) ১৪. কোরআন পড়ুয়ার দৃষ্টান্ত : রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইমানদার কোরআন পড়লে তার দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার মতো, যে ইমানদার কোরআন পড়ে না সে খেজুরের মতো...।’ (সহিহ বোখারি-৫৪২৭) ১৫. মানুষের তিলাওয়াত আল্লাহর ফেরেস্তারাও শোনেন।’ (সহিহ মুসলিমণ্ড১৭৪৪)

আসুন পবিত্র কোরআনের সংস্পর্শে এসে নিজেকে আলোকিত করি। আমিন।

লেখক : পরীক্ষক, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close