reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল, ২০২৩

সাংবাদিকতাকে যেন কলুষিত করা না হয়

বর্তমান যুগ অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগ। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের চারদিকে সীমানাঘেরা কিন্তু আকাশপথের কোনো সীমানা নেই। ফলে বিশ্বময় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা মানুষ এখন মুহূর্তেই জানতে ও শুনতে পারছে। বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এক বিস্ময়কর ব্যাপার। সত্যি বলতে কী, গণমাধ্যমের পুরোনো ধ্যান-ধারণার এত দ্রুত পরিবর্তনে মানুষ আজ রীতিমতো চমকিত। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধু তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সহজলভ্যের কারণেই।

কিন্তু এখানে বিপত্তিও আছে। আর সেটি হলো অনলাইন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটায় অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের বা গুজব ছড়ানোর প্রবণতা বেড়ে গেছে। সংবাদগুলোর ভেতর সব সময়ই একটা প্রতিযোগিতা চলে কে কার আগে এবং কত দ্রুত সংবাদ পরিবেশন করবে তা নিয়ে। এতে একটা ভালো সংবাদ যেমন দ্রুত ছড়িয়ে যায়, তেমনি একটি মিথ্যা সংবাদও। মিথ্যা সংবাদের মাধ্যমে জনমনে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। নীতিনৈতিকতা বা নীতিমালা অনুযায়ী কোনো গণমাধ্যমই গুজবে কান দিতে পারে না বা গুজব ছড়াতে পারে না। গণমাধ্যমের দায়িত্বই হলো খবরের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করা। গণমাধ্যমের কাজই যেখানে মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়া, সেখানে যদি বিভ্রান্তি ছড়ায় তাহলে আর সত্য প্রকাশ করবে কে? সেটা অন্তত মূলধারার গণমাধ্যমের কাছে আশা করা যায় না।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে একটি শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের যে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেশের স্বাধীনতাকেই মূলত ব্যঙ্গ করা হয়েছে। অন্য একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ওই শিশুকে দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে ছবি তোলা হয়েছে এবং একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি বা মিথ্যা উদ্ধৃতি প্রকাশ, ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সঙ্গে প্রতারণারই শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এসব রীতিনীতি ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। একটা শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে প্রলুব্ধ করে তার ছবি তুলে এর সঙ্গে মিথ্যা বক্তব্য জুড়ে দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা কতটা যৌক্তিক সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এমন বিভ্রান্তিকর সংবাদটি পরিবেশন করা হয় স্বাধীনতা দিবসে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। এমনটি যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এখানে আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন, এ অবস্থায় বিদেশিদের কেউ কেউ বাক্স্বাধীনতার সাফাই গাইছে। বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। বিদেশিদের মনে হয় অপরাধীদের পক্ষে থাকাটাই চরিত্র।

সাংবাদিক হলেই যে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন এমনটি ভাবা মনে হয় উচিত হবে না। আইনের চোখে সবাই সমান। আর অপরাধী, অপরাধীই। তাকে হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়াটাও বোধ হয় ঠিক হবে না। মহান স্বাধীনতার অবমাননা করা, অবুঝ শিশুকে টাকা দিয়ে প্রলুব্ধ করে তাকে অপব্যবহার করা নীতিনৈতিকতাণ্ডবিবর্জিত কাজ। এর ফলে একটা শিশুর জীবনকে শঙ্কার মধ্যে ফেলা দেওয়ার শামিল। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। ক্লাস ওয়ানে পড়া একটা শিশুকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংবাদ প্রকাশ করে কোনো গণমাধ্যম নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে পারে না। এটা জঘন্য অপরাধ। এমন অপরাধের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করলে বিদেশিরা বাধা দেয়। যদি বলা হয়, ওই ঘটনার পর যেসব দেশ বিবৃতি দিয়েছে সেসব দেশেই যদি কোনো একটা শিশুকে এভাবে প্রভাবিত করা হতো সেই পরিস্থিতিতে তারা কী করত? কী ব্যবস্থা নিত? তাদের কাছে এই প্রশ্ন রইল। একই সঙ্গে আমরা বলব, সাংবাদিকতা যে মহান পেশা সেটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের প্রতিটি গণমাধ্যমেরই উচিত দেশ ও মানুষের কথা ভেবে সর্বদা সত্য সংবাদ প্রকাশ করা। আমরা যেন গণমাধ্যমকে কলুষিত না করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close