মোহাম্মদ অংকন

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

মতামত

স্বাধীনতার ৫২ বছর কতটা উন্নত হলো দেশ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সঠিক দিকনির্দেশনায় মাত্র নয় মাসে পশ্চিম পাকিস্তানের পরাধীনতার শেকল থেকে বাঙালি জাতি মুক্ত হয়। সেই স্বাধীনতার আজ ৫২ বছর পূর্ণ হলো। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত থাকা সবাইকে।

১৯৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ আর বর্তমানের স্মার্ট বাংলাদেশ- এই ৫২ বছরে বাংলাদেশ কতটা উন্নত হয়েছে, সে সম্পর্কে আলোচনা করা সহজসাধ্য নয়। তবে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, যা একটি আলোচনাযোগ্য বিষয়। তাই আমার কাছে যেসব বিষয়ে আলোচনা না করলেই নয়, তা নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করা হলো মাত্র।

শিক্ষা খাতে উন্নয়ন : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিভিন্ন উন্নয়নের মধ্যে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটেছে চোখে পড়ার মতো। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার পরপরই শিক্ষা খাতের উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরকে মজবুত করতে সুদূরপ্রসারী চিন্তাচেতনায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অধিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুযোগ ও সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে বর্তমানে দেশে প্রায় সবাই প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষার পর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার শিক্ষা খাতে প্রচুর পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করে থাকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় শিক্ষা অর্জনের সুযোগ-সুবিধার দ্বার অবারিত হয়েছে। কারিগরি, মাদরাসাসহ নানামুখী শিক্ষা প্রসারে বাংলাদেশের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য।

প্রযুক্তির উন্নয়ন : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেটের এই বহুল ব্যবহারের কারণে দেশের প্রযুক্তি খাতে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। এখন দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো স্মার্টফোন, কম্পিউটার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্সসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি বিদ্যমান। এজন্য দেশে প্রায় সবাই তাদের মোবাইল ফোনের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ বিন্যাস করে তাদের প্রযুক্তি ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। দেশে বিভিন্ন সেবা এবং ব্যবসার জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম এখন মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম এবং অনলাইন সেবা প্রদানে দেশ উন্নত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দেশে সব শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল শিক্ষা প্ল্যাটফরম দেওয়া শুরু হয়েছে।

প্রযুক্তি খাত নিরবচ্ছিন্ন করতে দেশে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নামে একটি সফল স্পেস প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের স্পেস প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থা এবং প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তি উন্নয়নে নানা প্রকল্প চালু আছে। সেখানে অনেকেই নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নারীরা ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে রেমিট্যান্স আয় করছে, যা দেশের অর্থনীতি খাতকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করছে।

প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান খাতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এখন। তাই তো ২০৪২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সমন্বয়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও প্রচার-প্রসারের জন্য কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের টেলিকম ইনফ্রাস্ট্রাকচার খুব ভালো, যার ফলে দেশের আনাচে-কানাচে থেকে সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। তাই প্রযুক্তি বিকাশে গৃহীত পদক্ষেপগুলো দ্রুত আলোর মুখ দেখছে, যা স্বাধীনতাণ্ডপরবর্তী বাংলাদেশকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য খাতেও দেশ উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশে এখন যে পরিমাণে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ, প্রাইভেট হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা রয়েছে, সেই ৫২ বছর আগে ছিল না। ছিল না চিকিৎসাব্যবস্থার এত আধুনিকায়ন, ছিল না ওষুধ তৈরি ও সংরক্ষণের প্রযুক্তি। এখন মানুষ ঘরে বসেই ডাক্তারের সেবা ও পরামর্শ নিতে পারে। এ ছাড়া দেশে জনস্বাস্থ্য প্রকল্প চালু রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বিনা খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায়, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য কল্যাণমুুখী।

আর্থিক উন্নয়ন : বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর অর্থনীতির ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ একটি বৃহৎ শিল্প এবং সেবা উন্নয়ন সংস্থার দেশ হিসেবে পরিচিত। সেই সংস্থাগুলোর মধ্যে হলো- গার্মেন্ট, ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স সেবাগুলো উল্লেখযোগ্য। মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মাথাপিছু আয়। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে পেশাগত বৈচিত্র্য ও উন্নয়নে আর্থিক খাতে মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে। ব্যবসায় বিনিয়োগ, ক্ষুদ্র ব্যবসার যাত্রাকরণ আর্থিক খাতে উন্নয়নেরই ফল।

নারীদের উন্নয়ন : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ রয়েছে। একাত্তরে নারীরাও যেমন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, এখনো তারা নিজেদের ভাগ্য বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই সরকারও নারীদের প্রতি আস্থা রেখে নারীদের উন্নয়নের পথকে সুগম করে দিয়েছে। দেশে নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ও সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে, যার মাধ্যমে

নারীরা নিজেদের উন্নয়ন করতে পারছে। এখন আর নারীদের ঘরে বন্দি করে রাখা হয় না। নারীরা শিক্ষা অর্জন করছে, দক্ষ হচ্ছে। পুরুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। দেশের উন্নয়নে নারীদের সার্বিক অংশগ্রহণ স্বাধীনতার একটা যুগান্তকারী সফলতা।

সারমর্ম টেনে বলতে গেলে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫২ বছরে একটি পরিবর্তনশীল দেশ হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রতিনিয়ত উন্নয়ন হচ্ছে। এই ধারা চলমান থাকলে শিগগিরই উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে পারবে। একটা দেশের আমূল পরিবর্তন সাধনে স্বাধীন হওয়া কতটা জরুরি, তা বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পেরেছে। নয়তো সবুজ-শ্যামল এই বাংলায় কী যে দুঃশাসন চলত, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভূখণ্ডে উন্নয়ন তো দূরে থাক, জাতিগত বিদ্বেষ, ভাষা ও ধর্ম ব্যবহারের পরাধীনতা নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে দাসত্ব করতে হতো পাকিস্তানের কাছে।

প্রতিটি জাতিকে বাঁচানোর জন্য, জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়া রোধে ও পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্তি দিতে কেউ না কেউ মুক্তিকামী হিসেবে আগমন করে। বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার কারণে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে বাঁচতে পারছি। শুধু তা-ই নয়, আমরা এখন হিসাব করতে পারছি সেই স্বাধীনতাপ্রাপ্তির দিনগুলো থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কতটা উন্নত হলো। এই যে আমাদের চরম সৌভাগ্যের বিষয়। সেই সৌভাগ্যকে পাথেয় করে আমাদের শপথ করতে হবে- কাঁধে কাঁধ রেখে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে নিয়ে যেতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী কোনো অপশক্তি যেন বাংলাদেশের উন্নয়নগতিকে মন্থর করতে না পারে, সেদিকেও কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।

লেখক : সাহিত্যিক ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close