মো. শাহজাহান কবীর

  ২০ মার্চ, ২০২৩

মুক্তমত

রমজানের প্রস্তুতি

হিজরি সালের শ্রেষ্ঠ মাস মাহে রমজান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহতায়ালা এ মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহর মাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। রমজান মাসের যেকোনো পুণ্য ও কল্যাণময় কাজের পুরস্কার বহু গুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান। আর একটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান করে বান্দার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

রোজার পুরস্কার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘এ রমজানে মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। তবে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিন্তু রোজার বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রম। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম)

মুমিনের ইবাদত হবে সার্বক্ষণিক। সে সব সময় আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়ে থাকবে। উত্তম সময়কে বেশি করে কাজে লাগাবে। আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ অনুগ্রহে বান্দাকে এমন কিছু সময় উপহার দিয়েছেন, যার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বান্দা সম্মানের উচ্চ মাকামে পৌঁছে যেতে পারে। তেমনি একটি মাস রমজান। ইবাদতে পূর্ণতা লাভে বান্দার এক অনন্য সুযোগ।

কোনো কিছু করার আগে আমরা সাধারণত পরিকল্পনা করে থাকি। রমজান মাসের ইবাদত করার জন্য পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি গ্রহণ করাও মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। সাহাবিদের জীবনী পড়লে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে তারাও ইবাদতের পরিকল্পনা করতেন। তাই আমাদের রমজানের আগেই রোজার প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

মহানবী (সা.) রমজানের দুই মাস আগে থেকেই রমজানপ্রাপ্তির জন্য দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করুন। আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (শুআবুল ইমান) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে মহানবী (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলে পাক (সা.) প্রায় পুরো শাবান মাসই নফল রোজা রাখতেন।’ (মুসলিম) রমজান রহমত, বরকতময় ও নাজাতের মাস। পুণ্য হাসিলে এর চেয়ে সুবর্ণ সুযোগ আর কিছু হতে পারে না। রমজান মাসে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আল-বাকারার ১৮৫ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মীমাংসারূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোজা রাখে।

আর যে রোগী বা মুসাফির, তাকে অন্যদিন এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের কষ্ট দিতে চান না, যাতে তোমরা নির্ধারিত দিন পূর্ণ করতে পারো এবং তোমাদের যে সুপথ দেখিয়েছেন, সেজন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’

হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাস এলেই জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানদের বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়।’ (মুসলিম)

রমজানবিষয়ক হাদিসগুলো থেকে জানা যায়, রাসুলে পাক (সা.) সাহাবিদের রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নানাভাবে উৎসাহিত করতেন। কল্যাণ আহরণে আত্মনিয়োগের পরামর্শ দিতেন। রমজানের ফজিলত সম্পর্কিত আলোচনা করতেন। তিনি বলতেন, ‘রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন করা আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আল্লাহ প্রদত্ত একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো মহাকল্যাণ থেকে।’ (নাসায়ি)

পবিত্র কোরআন ও রাসুলে পাক (সা.)-এর হাদিস থেকে জানা যায়, রমজানের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা; মানসিক ও আত্মিকভাবে রমজানের জন্য ব্যাকুল হওয়া এবং দোয়া ও আমলের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করা মুমিন মুসলমানের জন্য জরুরি।

লেখক : চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close