reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ মার্চ, ২০২৩

পাটের সুদিন ফিরে আসুক

পাটকে বলা হয় সোনালি আঁশ। পাটের রয়েছে নানান ব্যবহার। বাংলাদেশকে একসময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হতো। এর কারণ বাংলাদেশের পাটের বিশ্বময় সুখ্যাতি ছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগই আসত পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে। কিন্তু কালের চক্রে পাটের সেই সোনালি দিন হারিয়ে গেছে। প্লাস্টিকসহ বিকল্প অনেক পণ্যের ব্যবহার বাড়ায় পাটপণ্য হারায় তার আভিজাত্য। ফলে এক এক করে একসময়ের অনেক পাটকলই বন্ধ হয়ে যায়।

প্লাস্টিক এখন সর্বত্রই। কী অফিসের কাজে, কী ঘরে- সব জায়গায় প্লাস্টিকের রাজত্ব। সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়ে যাবে। চলতি শতকে আমরা যে পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপাদন ও ভোগের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তা পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড! তবে আশার কথা হলো, পাটের সুদিন ফেরাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। মানসম্মত পাট উৎপাদন, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ, পাটকলের আধুনিকায়ন, পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ- এই পাঁচটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে জাতীয় পাটনীতিতে। এ ছাড়া পাট নিয়ে উৎসাহ ও জনসচেতনতা যেমন বাড়ছে, তেমনি স্বপ্ন দেখার পরিসরটাও বড় হচ্ছে। অতএব বলাই যায়, পাটের হারানো অতীত আবার একটু একটু করে ফিরে আসছে। লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল। তিন বছর বন্ধ থাকার পর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সেটিও আবার চালু হয়েছে। এতে ভাগ্য ফিরেছে শ্রমিকদের। তারা সুদিনের সন্ধান পেয়েছেন। মিলটি কুষ্টিয়ার রশিদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০ বছরের ভাড়ায় আলেয়া জুট মিল নামে চালু করে। কয়েক বছর পর মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে ৯ শতাধিক শ্রমিক অর্থকষ্টে পড়েন। তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশার কালো ছায়া। সেই কষ্টের দিন এখন অতীত হতে চলেছে।

মিল সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে সিরাজগঞ্জ শহরের রায়পুরে ৭৫ একর জমির ওপর নর্দান পিপলস্ জুট মিল নামে এ পাটকলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালে মিলটি রাষ্ট্রায়ত্ত মিল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন মিলটি কমবেশি লাভজনক পর্যায়ে ছিল। কিন্তু একশ্রেণির সুবিধাভোগী এবং কাঁচামাল ক্রয়ে শ্রমিক নেতাদের দুর্নীতিসহ নানা কারণে মিলটিকে লোকসান গুনতে হয়। অব্যাহত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মিলকে ঘিরে নানা ধরনের ক্ষুদ্রশিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও পড়ে হুমকির মধ্যে। এদিকে কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় মিলটি। এরপর ২০১১ সালে শ্রমিক-কর্মচারী ও জনসাধারণের আন্দোলনের কারণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ‘জাতীয় জুট মিল’ নামকরণ করে মিলটি আবার চালু করা হয়। এরপর টানা কয়েক বছর চালু থাকলেও ঋণের ভারে ২০১৯ সালে আবার বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। এতে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন শুরু করে। সেই সঙ্গে সিরাজগঞ্জের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সামান্য হলেও থমকে যায়। এটি আবার চালু হওয়ায় সংকট আস্তে আস্তে কেটে যাবে এবং পাটপণ্যের উৎপাদনও বাড়বে সেই আশা কর্তৃপক্ষের।

পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিপুল শ্রমিকের স্বার্থের দিকে নজর দিতে হবে। কৃত্রিম পণ্যের কাছে পাট খাত যাতে মার না খায় সে উদ্যোগও নেওয়া দরকার। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close