
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ জরুরি

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু প্রতিদিনকার ঘটনা। সড়কে যেন প্রতিদিন কোনো না কোনো নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতেই হবে, এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে অপরিকল্পিত স্পিড ব্রেকার বা গতিরোধকগুলোও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করা, অদক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানোও অন্যতম কারণ।
বলা যায়, দেশবাসীর জন্য সড়ক দুর্ঘটনা এক অনিবার্য নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে যেন কোনোই মুক্তি নেই। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই অনেকবার দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চার জেলায় পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ২৩ জন। নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বাসচাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ফলভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় লোহার খুঁটি পড়ে ফল ব্যবসায়ী এবং মেহেরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী ও চালক নিহত হয়েছেন। এভাবেই মৃত্যুর মিছিল বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির এক তথ্যে জানা যায়, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনের (নিটোর) ইমার্জেন্সিতে প্রতিদিন ৩০০ রোগী আসেন, যাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার রোগী। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের অধিকাংশের বয়স ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে এবং দেখা যায় তারাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়। দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়।
দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের ব্যাপক ব্যবহার। এ ছাড়া উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহনের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। কিছু দুর্ঘটনার জন্য দায়ী জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন এবং সড়কবাতি না থাকা। দুর্ঘটনা বন্ধে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে চলাচলের জন্য আলোর ব্যবস্থা করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ধীরগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করা জরুরি। তা না হলে কিছুতেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ দেওয়া হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনাগুলোই এর বড় প্রমাণ।
কয়েক দিন পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। তারপর ঈদুল ফিতর। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বেড়ে যায়। তাই চালকদের মধ্যেও একটা বেপরোয়া মনোভাব চলে আসে। তাই রমজান মাসে বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে সড়ক দুর্ঘটনারোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। আমরা চাই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিয়জনের প্রাণ হারিয়ে আর কোনো পরিবার যেন নিঃস্ব না হয় এবং কেউ যেন পঙ্গুত্ববরণ করে দুর্বিষহ জীবন না কাটায়।
"