মো. আসাদুজ্জামান

  ১৬ মার্চ, ২০২৩

মুক্তমত

প্রশ্নবিদ্ধ মোটরসাইকেল নীতিমালা

সম্প্রতি বাংলাদেশে মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩-এর খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। এই নীতিমালা সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ১২৪ ধারার আলোকে (সরকারের আদেশ প্রদান, নীতিমালা প্রণয়ন, ইত্যাদির ক্ষমতা) করা হয়েছে। দুঃখজনক হলো, নীতিমালায় রয়েছে কিছু অবাস্তব ও বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা প্রদানের অপকৌশল।

এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি। কমিটিতে ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা। এর লক্ষ্য মূলত সড়কপথে দুর্ঘটনা হ্রাস করা। অথচ তা প্রণয়নে যাত্রীসেবার সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি, বাইকারদের বিভিন্ন সংগঠন বা প্রতিনিধি, বাংলাদেশে বাইক ইমপোর্ট কোম্পানির সংস্থা, বাইক উৎপাদন ও অ্যাসেম্বল প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাইক কোম্পানির প্রতিনিধি- কাউকে রাখা হয়নি। এদের সঙ্গে পরামর্শ বা আলোচনা ছাড়া এ রকম নীতিমালা কতটা কার্যকর হবে?

দেশে ৪০ লাখের অধিক বাইক ব্যবহারকারী আছে। যাদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে, তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা দরকার ছিল। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৪৮ ধারা অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক সাধারণত দ্রুতগতির মোটরযান চলাচলে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। কিন্তু এই আইনে কোনো সিসি লিমিট করা নেই।

মোটরবাইক মূলত দ্রুতগতির যানবাহন হিসেবে ধরা হয়। মহাসড়কে ৮০ কিমি গতির বিষয়টি ঠিক আছে। কারণ, যারা নিরাপদ বাইক ভ্রমণ করেন তারাও নিজের নিরাপত্তার জন্য ৮০ কিমি গতিতে বাইক চালান না। রাজধানী বা শহরের বাইকের গতি ৩০-৬০ কিমিতে নিয়ন্ত্রণ করা অবাস্তব ব্যাপার। রাজধানীর ফ্লাইওভারে যেখানে বাস ১০০ কিমি গতিতে চলবে, সেখানে বাইক ৩০ কিমি গতিতে চললে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাবে। আর শহরে যানবাহনের চাপে গাড়ির গতি ৩০-৪০ কিমির বেশি হয় না। আবার সব শহরের ধরন এক নয়। বিভাগীয় শহরে ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরচালিত রিকশা ৩০ কিমির বেশি গতিতে চলে, যা নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য। ৩০ কিমি গতিতে বাইক চালালে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটবে। অন্যান্য যানবাহনের গতি নির্ধারণ না করে শুধু বাইকের গতি নির্ধারণ করে দিলে সুফল আসবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, মহাসড়কে ১২৬ সিসির কম ক্ষমতাসম্পন্ন বাইকের ওপর নিষেধাজ্ঞা। হ্যাঁ, কম সিসির বাইকগুলোকে মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। কারণ, মহাসড়কের উচ্চ সিসির পরিবহনের চলার পথে এদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

কিন্তু সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে কয়টা মহাসড়ক আছে? বাংলাদেশের আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে ভ্যান, নছিমন, করিমন, ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা চলাচল করে। এসব মহাসড়কে বাজার বসে; রয়েছে যত্রতত্র পার্কিং। ফলে শুধু ১২৬ সিসির নিচের বাইক নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ হয়তো তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে, কিন্তু দুর্ঘটনা তাতে রোধ হবে না।

খসড়ায় বলা হয়েছে, আরোহী নিয়ে বাইক চালানো যাবে না। অথচ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৪৯ ধারার ১ উপধারার দফা ‘ছ’ অনুসারে, চালকসহ একজন অর্থাৎ দুজন বাইকে আরোহী হতে পারবে। আরোহী নিয়ে চলাচল বন্ধ করার উদ্দেশ্য হলো রাইড শেয়ারিং পেশাকে বন্ধ করা। রাজধানী শহরে যাত্রীরা গণপরিবহন এড়িয়ে রাইড শেয়ারিং ব্যবহার করার ফলে গণপরিবহন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে যাত্রীরা উপকৃত হয়। এদিকে রাইড শেয়ারিং নীতিমালাও কিন্তু পাস হয়ে আছে।

শুধু বাইক চলাচল নীতিমালা করে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩ পাস ও কার্যকর করার আগে এর সফলতা বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা উচিত। নইলে অন্যান্য নীতিমালার মতো এটা শুধু নীতিমালা হয়েই থাকবে এবং দুর্নীতির নতুন খাত খুলে দেবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close