reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

তিন ফসলি জমি রক্ষায় সচেতন হতে হবে

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, নগরায়ণ, দূষণ ও অপরিকল্পিত চাষাবাদসহ নানা কারণে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ কমে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মাটিও এখন হুমকির মুখে। কোথাও কোথাও তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে কোনো প্রকার নিয়মণ্ডনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে কৃষি আবাদ কমে যাচ্ছে, ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে।

গত চার দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশে আবাদি জমি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ১৯৮০ সালে মোট জমির তুলনায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ৬৫ দশমিক ৫০ ও ২০০০ সালে ৫৯ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে আসে। কৃষিজমির পরিমাণ কমার এ হার পরবর্তী বছরগুলোতেও অব্যাহত ছিল। ২০১০ সালে মোট জমির মাত্র ৫৮ দশমিক ২০ শতাংশ ছিল কৃষিজমি, যা ২০১৯ সালে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে আসে। ১৯৮০ সালে এক ফসলি জমির পরিমাণ ছিল মোট আবাদি জমির প্রায় ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ, যা ১৯৯০ সালে ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশে, ২০০০ সালে ৩৪, ২০১০ সালে ৩০ দশমিক ১ ও ২০১৯ সালে ২৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে। বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে আবাদযোগ্য ৮৫ ভাগ জমির উর্বরতা কমে গেছে। চাষযোগ্য কোনো জমিতেই নেই প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন। এছাড়া জৈব পদার্থের অভাব রয়েছে ৩৮ শতাংশ জমিতে। তাই ভবিষ্যতে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার ধরে রাখতে হলে জমির পুষ্টি ও উর্বরতার বিষয়ে এখনই বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

কৃষিজমি রক্ষার এবং অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বারবার তাগাদা দিয়েছেন। তিন ফসলি জমিতে সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রকল্প করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়ে বলেন, তিন ফসলি জমিতে কোনো ধরনের প্রকল্প নেওয়া যাবে না। এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সব উন্নয়ন কাজের জন্য এই নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। সরকার এখন তিন ফসলি জমি রক্ষার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরেই আমরা বলতে চাই, তিন ফসলি জমি রক্ষায় সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। আবাদি জমির মাটি রক্ষা করতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস বা অপরিকল্পিত চাষাবাদ করে কোনো জমি নষ্ট করা যাবে না। এছাড়াও ফলন বাড়াতে জমিতে আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। একইসঙ্গে বাণিজ্যিক কৃষিকে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে কৃষি খাতের মাধ্যমেই নিশ্চিত হবে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা, পূরণ হবে মানুষের পুষ্টি চাহিদা। সেইসঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান হাতিয়ার হবে এই কৃষি খাত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close